খেলা ডেস্ক: দেখতে দেখতে সেই ঘটনার ২৫ বছর কেটে গেল! শুধু বক্সিং কেন, অনেকের মতেই সমগ্র ক্রীড়া ইতিহাসেই এটি অন্যতম বিতর্কিত ঘটনা। ‘আইকনিক’–ও বলেন কেউ কেউ। ইভান্ডার হলিফিল্ড অবশ্য তাতে আপত্তি তুলতে পারেন। যাঁর যায় সেই তো বোঝে!
হলিফিল্ড? এই নামটা শুনলে অনেকের স্মৃতিতেই দৃশ্যটা ভেসে উঠতে পারে। হলিফিল্ডের ডান পাশের কান কামড়ে দিচ্ছেন মাইক টাইসন। শুধু কামড় কেন, খুবলে নিয়েছিলেন কানের একটা অংশও! রিংয়েই পড়ে ছিল খণ্ডিত টুকরোটা। তারপর তো অনেক জলই গড়াল। জরিমানা, লাইসেন্স বাতিল হওয়া ছাড়াও আরও শাস্তি পেয়েছিলেন ‘দ্য ব্যাডেস্ট ম্যান অন দ্য প্লানেট।’ সেই ঘটনার ২৫ বছর পূর্তি ছিল কাল।
একটু আগে থেকে শুরু করা যাক। টোকিওতে ১৯৯০ সালে বক্সার বাস্টার ডগলাসের মুখোমুখি হয়ে হারেন টাইসন। বক্সিং ইতিহাসে সেটি অন্যতম বড় অঘটন। এর দুই বছর পর ধর্ষণের অভিযোগে জেলে যেতে হয় টাইসনকে। ১৯৯৫ সালে ছাড়া পাওয়ার পরের বছর পেশাদার বক্সিং ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় হার দেখেন টাইসন। লাস ভেগাসে এমজিএম অ্যারেনায় ১১তম রাউন্ডে টাইসনকে নকআউট করেন ‘রিয়েল ডিল’ নামে খ্যাতি পাওয়া হলিফিল্ড।
টাইসনকে সে ম্যাচে হেরে যাওয়ায় প্রতিশোধের নেশাটা পেয়ে বসেছিল। হলিফিল্ডের সঙ্গে ১৯৯৭ সালের ২৮ জুন ‘রি–ম্যাচ’ আয়োজন করা হয়। প্রতিশোধের নেশায় মত্ত টাইসন এ ম্যাচেই কামড়–কাণ্ডটি ঘটান। পরে এই ‘রি–ম্যাচে’র নামকরণ করা হয় ‘দ্য বাইট ফাইট।’
সেই এমজিএম অ্যারেনাতেই আয়োজিত ‘রি–ম্যাচে’ প্রথম তিন রাউন্ড জেতেন হলিফিল্ড। শুরু থেকেই ‘আপারকাট’ ও ‘ওভারহেড পাঞ্চ’ করে টাইসনকে বিপর্যস্ত করে ফেলেন এই মার্কিন বক্সার। এই হতাশাই সম্ভবত নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে হলিফিল্ডের কানে কয়েকবার কামড় বসিয়ে দেন টাইসন। হলিফিল্ডের যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না।
রিংয়ে লড়াইয়ের মধ্যে কেউ তাঁর কানে কামড় বসাতে পারে! রেফারি মিলস লেনের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ করেন হলিফিল্ড। মিলস ঘটনার সত্যতা খুঁজে পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে টাইসনকে লড়াইয়ের অযোগ্য ঘোষণা করেন এবং জয় পান হলিফিল্ড। উপস্থিত দর্শকেরা তখনো কিছু বুঝে উঠতে পারেননি। অ্যারেনার জায়ান্ট স্ক্রিনে ‘স্লো মোশন’ ভিডিওতে ঘটনাটি দেখানোর পর পুরো পরিস্থিতিটা বুঝে নেন দর্শকেরা।
শাস্তি পেতে হয় টাইসনকে। বাতিল হয় লাইসেন্স, পরে তা ফেরতও পান। ১৯৯৯ সালের আগপর্যন্ত আর রিংয়ে নামতে পারেননি। সর্বকালের অন্যতম সেরা হেভিওয়েট বক্সার হিসেবে বিবেচিত হওয়া টাইসনের জীবনে ‘কালো দাগ’ হয়ে বসে যায় সেই কামড়। এখনো তা নিয়ে সমালোচনা হয়। কিন্তু হলিফিল্ডের সেই খণ্ডিত কানের অংশটুকুর কী হয়েছিল?
সাবেক বক্সার এবং হলিফিল্ডের তখনকার ট্রেনার টিম হলমার্ক ছাড়াও বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এমজিএম অ্যারেনা থেকে হলিফিল্ডকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় তাঁর খণ্ডিত কানের সেই অংশটুকু হারিয়ে যায়। তবে ভিন্নমতও আছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ‘ইউএসএ টুডে’র বক্সিং নিয়ে পোর্টাল ‘বক্সিংজাঙ্কি’ জানিয়েছে, এমজিএম অ্যারেনার এক কর্মচারী হলিফিল্ডের কানের অংশটুকু কুড়িয়ে বরফে চুবিয়ে রেখেছিলেন। এরপর লকার রুমের এক কর্মীকে তা হস্তান্তর করেন, যেন হাসপাতালে নিয়ে হলিফিল্ডের কানে তা জোড়া লাগানো যায়। কানের সেই অংশুটুকু নাকি হাসপাতালের চিকিৎসক পর্যন্ত পৌঁছেছিল। কিন্তু এরপর তা কোথায় কীভাবে হারিয়ে গেছে, কেউ জানে না।
হলিফিল্ডের কানে অস্ত্রোপচার করতে প্রায় ৯০ মিনিট সময় নেন চিকিৎসক। কামড়ের ক্ষতটি ঠিক করতে তাঁর কানে আটটি সেলাই দেওয়া হয়। কিন্তু টাইসনের দাঁতের কামড়ে কেটে যাওয়া অংশটা আর জোড়া লাগানো যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের আরেক ক্রীড়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘স্পোর্টসকাস্টিং’ জানিয়েছে, এমজিএমের সেই কর্মী রিংয়ে কানের খণ্ডিত অংশটুকু পেয়ে তা রাবারের দস্তানা দিয়ে ধরে ড্রেসিংরুমে হলিফিল্ডের দলের বাকি সদস্যদের কাছে পৌঁছে দেন। তাঁরাও রাবারের দস্তানা পরে খণ্ডিত অংশটুকু নিয়ে বরফের বালতিতে চুবিয়ে রাখেন। চিকিৎসকের কাছে তা হস্তান্তর করে হলিফিল্ডের কান জোড়া লাগানোই ছিল লক্ষ্য। অ্যাম্বুলেন্স থেকেই নাকি উধাও হয়ে যায় হলিফিল্ডের কাটা পড়া কানের অংশটুকু।
আপনার মতামত লিখুন :