শ্রাবণী, আসিফ ও মেহেরীন: ফাতেমা ফারহানা। সরকারি গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাত্তকোত্তরের পর বাংলাদেশ একাডেমিক ডায়টেটিকস এন্ড নিউট্রিশন প্রতিষ্ঠান থেকে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের নিউট্রিশনাল ম্যানেজমেন্ট কোর্স করেন। সর্বোচ্চ সিজিপিএ পেয়ে বৃত্তিও পেয়েছেন। বর্তমানে সরকারি গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের নার্সারি ল্যাবরেটরি, শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারি শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। তবে এর বাইরে তার রয়েছে আলাদা এক কাজের জগৎ। দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত আছেন শিশু বিকাশের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন সংগঠনের সাথে। আগামী প্রজন্মের শিশুদের মানসিক বিকাশ এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে চান তিনি। সম্প্রতি ইতিহাস প্রতিদিনের সাথে শিশুদের নিয়ে তার ভাবনার কথা বলেছেন শিশু বিকাশের এই কারিগর। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শ্রবণী খাতুন, আসিফ মিয়া ও মেহেরীন।
ইতিহাস প্রতিদিন: আপনার শিক্ষাজীবন সম্পর্কে জানতে চাই?
ফাতেমা ফারহানা: সরকারি গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাত্তকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছি। যার বর্তমান নাম গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্স।
ইতিহাস প্রতিদিন: বর্তমান কর্মক্ষেত্র কোথায়?
ফাতেমা ফারহানা: আমি বর্তমানে সরকারি গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের নার্সারি ল্যাবরেটরি, শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারি শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছি।
ইতিহাস প্রতিদিন: কী কারণে শিশুদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা হলো?
ফাতেমা ফারহানা: শিশু হলো জাতির সম্পদ। আর এই সম্পদকে তৈরি করতে হবে সমাজের গুরুজনকে। আমার বরাবরই ইচ্ছা ছিল শিশুদেরকে সৎ, যোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য কিছু করার। এ ইচ্ছা থেকেই আমি শিশুদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়। পরবর্তীতে শিশুদের নিয়ে লেখাপড়াও করি।
ইতিহাস প্রতিদিন: আপনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি আর কি বিশেষ শিক্ষা গ্রহণ করেছেন?
ফাতেমা ফারহানা: আমার বরাবরই শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগে পড়ার বিষয়ে অনেক কৌতূহল ছিল। সেজন্য আমি আমার একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি ২০১৭ সালে ইপনা বিভাগ ,বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাপাতালে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের থেরাপি সম্পর্কে জেনেছি শিখেছি। এছাড়া বাংলাদেশ একাডেমিক ডায়টেটিকস এন্ড নিউট্রিশন প্রতিষ্ঠান থেকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের নিউট্রিশনাল ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে একটি কোর্স সম্পন্ন করেছি। যা আমাকে সামনের দিকে অগ্রসর হতে সহায়তা করবে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের নিয়ে কিছু প্রশিক্ষণমূলক কাজ করছে এমন একটি প্রতিষ্ঠান সুইড। বাংলাদেশ যেখান থেকে আমি স্বল্পকালীন একটা প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছি। পাশাপাশি আমি কাজ করেছি গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ ডিবেটিং ক্লাবে।
ইতিহাস প্রতিদিন: বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কি?
ফাতেমা ফারহানা: সাধারণ শিশু এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য কিছু করতে পারা আমার জীবনের একটা স্বপ্ন। এটা আমার ভালো লাগার জায়গা। আমি চাই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সার্বিক সহায়তায় যেন আমি এগিয়ে আসতে পারি। আমাদের এই বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা আমাদেরকে সহায়তা করবে আগামী প্রজন্মের শিশুদের মানসিক বিকাশে এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে।
ইতিহাস প্রতিদিন: শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের পাশাপাশি শিশুদের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ কোনটি?
ফাতেমা ফারহানা: আজ যারা শিশু আগামী দিনে তারাই দেশের কর্ণধার হয়ে উঠবে। ফলে শিশুদের জন্য পুষ্টিকর খাবার কিংবা নির্দিষ্ট বয়স থেকে পড়াশোনার ব্যবস্থা করা যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি হল বিনোদন। ২ থেকে ৫ বছর বয়সে শিশুদের মেধার বিকাশ ঘটে, এই সময়টায় বিনোদনের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকলে তাদের সঠিক বিকাশ বাঁধাগ্রস্থ হয়। তাই ভবিষ্যতের জন্য সুনাগরিক হিসেবে শিশুদের গড়ে তুলতে হলে সবগুলো বিষয়ের পরিমিত উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
ইতিহাস প্রতিদিন: শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য কি কি করা প্রয়োজন?
ফাতেমা ফারহানা: শিশুদের নিয়ে কাজ করার জন্য শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য আমাদের প্রথমেই দরকার ধৈর্যশীল হওয়া, তাদের সাইকোলজি বোঝা, তারা যাতে প্রকৃতির সাথে অ্যাডজাস্ট করতে পারে সেই বিষয়টার দিকে খেয়াল রাখা। কারণ আমাদের মনে রাখতে হবে প্রত্যেকটা শিশুরই নিজস্ব ব্যক্তিসত্তা থাকে। তাদের সাথে কখনোই না শব্দ ব্যবহার না করা। তাদের মত করে তাদের সার্বিক বিকাশে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন আমাদের কিছু প্রচেষ্টা। এই প্রচেষ্টায় আমাদের বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যেতে পারে কারণ আজকের শিশু আগামী ভবিষ্যৎ। আমি আমার এই বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনাকে কাজে লাগিয়ে আগামীর সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে শিশুদের জন্য এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য কিছু কল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণ করতে চাই।
আপনার মতামত লিখুন :