ওসমান সরদার, জাবি প্রতিনিধি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) এক ছাত্রদল কর্মীকে ছাত্রলীগের কর্মীদের ধাওয়া দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বটতলা বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী ছাত্রদল কর্মী রাজন হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি ছাত্রদলের পারভেজ মল্লিক গ্রুপের সাথে রাজনীতিতে যুক্ত আছেন।
ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদশীর্দের সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে বটতলা বাজারে স্থানীয় কয়েকজনের সাথে বসে চা খাচ্ছিলেন রাজন। হঠাৎ মোটরসাইকেলে সেখানে উপস্থিত হন ৪৪ ব্যাচের ছাত্রলীগ নেতা সাব্বির হোসেন নাহিদসহ কয়েকজন। তাদেরকে দেখে রাজন উঠে দাঁড়ান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র হিসেবে কথা বলেন। তবে রাজনের উপর চড়াও হন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় তারা বলতে থাকেন, ‘তুই ছাত্রদল করিস, তুই ফেসবুকে সরকারবিরোধী পোস্ট দেস। তুই রাজনীতি করবি ফেসবুকে। এখানে কি করিস?’ এসময় তারা তাকে মারধর করতে চাইলে সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যান রাজন। পেছন পেছন তাকে ধাওয়া করেন ছাত্রলীগ কর্মীরা। এসময় ‘রাজন এখানে ছাত্রদলের মিটিং করে না কি— নিশ্চিত হওয়ার জন্য আশেপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসা করেন তারা।
এ ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের সহ—সভাপতি সাব্বির হোসেন নাহিদ ও তার অনুসারীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বলে জানান ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা। তিনি নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৪৪ ব্যাচ ও শহীদ রফিক—জব্বার হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী রাজন জানান, রাত নয়টার দিকে আমি বটতলা বাজারে বসে চা খাচ্ছিলাম। আমার সাথে আরো দুইজন লোক ছিল। চা খেয়ে বের হয়েছি ৪৪ ব্যাচের সাব্বির ভাই বাইকে আরেকজন এসে নামে। পেছনে আরো ৮/১০ জন ছিল। তাদের কাউকে আমি চিনিনা। এসেই কোন কথা নাই। আমাকে গালি দিয়ে বলে, তুই এখানে কি করোস? তুই ফেসবুকে থাকবি। ফেসবুকে ছবি দেস, রাজনীতি করিস। এখানে কি করিস? আমি সুন্দর করে ওনাকে সালাম দিয়ে কথা বলতে গেলাম। উনি আমাকে বলে, ‘রাজনৈতিক প্রোগ্রাম করিস? মিটিং—মিছিল করিস?’ এটা বলেই হাতে আঘাত করে। আমার ঘড়িটা ছিড়ে যায়। আমার সাথে আর কেউ ছিল কিনা; আমাকে চিনে কিনা— এটা সবাইকে জিজ্ঞেস করতে থাকে। আমি তখন ঐ জায়গা থেকে দৌড়ে পালাই। ঐ জায়গায় তখন সকল মানুষ বিষয়টা দেখছে।.
এ ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা সাব্বির হোসেন নাহিদ বলেন, ‘সে অনেকদিন ধরেই ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত। সম্প্রতি যেসব ঘটনা ঘটেছে ফটকে তালা মারা, ভবনে সুপারগ্লু মারার মত নাশকতা তারা করেছে। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে এসব কর্মকান্ডে তাকে যেন দেখা না যায়। সামনে নিবার্চন, ক্যাম্পাসের আশেপাশে দেখা গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক পযার্য়ে সে দৌড় দিয়ে চলে যায়। তাকে মারধরের মত কিছু ঘটে নাই। আমরা দুজনেই তখন বাইকের উপর বসা ছিলাম। তবে শুধু ও না; ছাত্রদলের আশেপাশে যারা আছে তাদের দেখা গেলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে।
উল্লেখ্য, এর আগে চলতি বছরের ৫ মে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ইসলামনগর এলাকায় এক ব্যবসায়ী ও দোকানের কর্মচারীকে মারধরের অভিযোগ উঠে সাব্বির হোসেন নাহিদসহ আরো এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। পরের দিন ৬ মে পাথালিয়া ইউনিয়নের এক ইউপি সদস্যকে পেটানোর অভিযোগ উঠে তাদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার বিচার চেয়ে আশুলিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ মে সংগঠন বিরোধী, শৃঙ্খলা পরিপন্থি, অপরাধমূলক এবং সংগঠনের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়— এমন কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে সাব্বির হোসেন নাহিদকে ছাত্রলীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। পরে ১০ জুলাই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাদের ওপর আরোপিত সাময়িক বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।