ওসমান সরদার, জাবি প্রতিনিধি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হলে গেস্টরুম চলাকালীন চড় মেরে এক শিক্ষার্থীর কান ফাটিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হাসান মাহমুদ ফরিদের বিরুদ্ধে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ৪৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম সজীব আহমেদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, মঙ্গলবার (২১ মার্চ) রাত সাড়ে ৮ টা থেকে গেস্টরুম শুরু হয়। দুপুরে হলের সিনিয়রের অতিথির সাথে জুনিয়রদের খারাপ ব্যবহার করাকে কেন্দ্র করে চলতে থাকে গেস্টরুম। আনুমানিক রাত ১০ টা ৪০ মিনিটে ভূক্তভোগী সজীবের কানে এলোপাথাড়ি চড় মারে ফরিদ। এতে সজীবের কান ফেটে রক্ত বের হতে থাকে। সে কেঁদে কেঁদে অনুরোধ করে, “ভাই, আমাকে ছেড়ে দিন। আমি আর রাজনীতি করবো না। বাসায় চলে যাবো।”
এরপরে গেস্টরুমে উপস্থিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ফারুক ইমরান (ইতিহাস-৪৪), বলেন, “ও নাটক করতেছে। ওরে তোল। আজকে এই গেস্টরুম থেকে ওর লাশ বের হবে।”
পরে কয়েকজন সজীবকে ধরে মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য বের হলে ইমরান তাদের বাধা দিয়ে বলেন, “আগে দেখ ও নাটক করতেছে কিনা। ২০-৩০ মিনিট অবজার্ভ কর। তারপরে মেডিকেলে নিয়ে যা। আর এখন মেডিকেলে নিয়ে গেলে নিউজ হবে। তখন আমরা বিষয়টা হ্যান্ডেল করতে পারবো না।”
এরপরে ইমরান সজীবকে হলগেটে আরো ১৫-২০ মিনিট আটকে রেখে মেডিকেলে যেতে বাধা দেন। পরে সজীবের অবস্থা আরও খারাপ হলে তাকে প্রথমে বিশ্ববিদালয়ের কেন্দ্রীয় মেডিকেলে এবং পরে সাভারের এনাম মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তিনি এনাম মেডিকেলে আছে।
অভিযুক্ত একজন (ইমরান ৪৪) স্বীকার করেছেন যে, ‘ভুক্তভোগীর সারাদিন ক্লাস-এসাইনমেন্ট থাকার ফলে গেস্টরুমে এসে শারীরিক দূর্বলতা জনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছে’। গেস্টরুমের ব্যাপারে তিনি বলেন, রোজার আগে এটি আমাদের রুটিন গেস্টরুম। নির্দিষ্ট করা ছিলো না, আজকে আমাদের হয়েছে কাল হয়তোবা অন্যদের হবে। রোজায় সাংগঠনিক দিকনির্দেশনা দেয়ার জন্য এ গেস্টরুম।
তবে অপর অভিযুক্ত ফরিদ (পরিবেশ বিজ্ঞান ৪৪) এ ব্যাপারটি অস্বীকার করে বলেন, ‘এরকম কিছু আজকের গেস্টরুমে ঘটেনি। কেউ আহত হয়নি। এ তথ্য আমি জানেন না’। তবে আজকে গেস্টরুম হয়েছে এ ব্যাপারটি তিনিও স্বীকার করেছেন।
এ ব্যাপারে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার মামুন জানান, “রাত সাড়ে বারোটার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী ইমার্জেন্সি বিভাগে এসেছিল। কানে সমস্যা থাকায় ইমার্জেন্সি ডাক্তার তাকে তিনতলায় ওটিতে (অপারেশন থিয়েটার) পাঠিয়েছিল। সেখানে ইএনটির (নাক-কান-গলা) ডাক্তার তাকে দেখেছেন। পরবর্তীতে সেখানে ট্রিটমেন্ট নিয়ে তিনি হাসপাতাল থেকে চলে গেছেন।”
মীর মশাররফ হোসেন হল এর প্রভোস্ট অধ্যাপক এম ওবায়দূর রহমান বলেন, আমি ইতোমধ্যেই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলেছি। সে এখনো আমাদের কাছে লিখিতভাবে কিছু দেয়নি। সন্ধ্যায় আমরা হল প্রশাসন মিটিং ডেকেছি। এরপর আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থা নিব।
এসময় গেস্টরুমে ঘটনা চলাকালীন সময়ে জাবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ (মার্কেটিং-৪৪), সামিন ইয়াসিক শাফিন (ইংরেজি-৪৪), শাহ পরান (আন্তর্জাতিক সম্পর্ক-৪৪), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন (রসায়ন-৪৪), আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান (আন্তর্জাতিক সম্পর্ক-৪৫), উপ-ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক আলরাজি সরকার (সরকার ও রাজনীতি-৪৫) উপস্থিত ছিলেন। তারা সকলে মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।