জাবিতে ‘বাংলাদেশে বণ্যপ্রাণীর ভবিষ্যত’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

0

ওসমান সরদার, জাবি প্রতিনিধি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রাণীবিদ্যা বিভাগ ও ডিপ ইকোলজি এন্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে ‘বাংলাদেশে বণ্যপ্রাণীর ভবিষ্যত’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার (১১ই আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ড. এ আর মল্লিক লেকচার হলে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ। সেমিনারে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুবাই সাফারি পার্কের বণ্যপ্রাণী গবেষক ড. মোহাম্মদ আলী রেজা খান।

ডিপ ইকোলজি এন্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা অনন্যা ফারিয়ার সঞ্চালনায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে ড. মোহাম্মদ আলী রেজা খান বলেন, “আমাদের দেশে তিন প্রজাতির গন্ডার ছিল যা বর্তমানে বিলুপ্ত। বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সংরক্ষণের দিক দিয়ে একেবারেই পিছিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশের গ্রাম্য অঞ্চলে বনভূমি কমে গেছে। বন্য প্রাণীদের রেসকিউ করে অবমুক্ত করার প্রাথমিক যুগ শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে দেশের তরুণ সমাজ আরও উন্নতি লাভ করবে।”

তিনি আরও বলেন, ” সুন্দরবনে বর্তমানে যে বাঘগুলোকে রয়েছে, তা পৃথিবীর কোথাও শিফট হতে পারবে না , তাই বাংলাদেশের বাঘের জন্য সুন্দরবন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুন্দরবনে হরিণের সংখ্যা বাড়লে, বাঘের সংখ্যাও বাড়বে। তাই হরিণের খাবার উপযোগী গাছ রোপণ করতে হবে তাদের উচ্চতা অনুযায়ী, যাতে করে সহজেই তারা বিচরণ করতে পারে। দেশের বন্য প্রাণীর সংখ্যা বাড়াতে না পারলেও, এটাকে কোনোভাবে কমতে দেওয়া যাবে না। এজন্য সরকার ও জনগণকে একযোগে পরিকল্পনা ভিত্তিক প্রকল্প নিতে হবে। বন্য প্রণী আটকে রাখার কারও অধিকার নেই, তবে চিড়িয়াখানায় রাখতে হলে সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

কোনো প্রাণীকে উদ্ধার করাই শেষ কাজ না, তার বিচরণের জন্য সুস্থ ও উপযোগী পরিবেশ দিতে হবে। এজন্য বাংলাদেশ সরকার চাইলে আলাদা বন্য প্রণী বিভাগ তৈরি করে যারা ওয়াইল্ড লাইফ নিয়ে কাজ করতে চায় তাদেরকে ট্রেনিং এর ব্যাবস্থা করা যেতে পারে। যদি সরকার, এনজিও ও গবেষকদের সাথে মিলে মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়,তাহলে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।

প্রাণী বাড়ানোর চেয়ে, বর্তমানে যা আছে, তাদেরকে ভালোভাবে পরিচর্চা রাখা উচিত। যা আছে তাই ধরে রাখতে হবে, যেন না কমে। এক্ষেত্রে চিড়িয়াখানা ও সাফারিপার্কে পরিকল্পনাভিত্তিক প্রাণীদের বসবাসের উপযোগী করে তুলতে হবে। আমার একটা অনুরোধ বাংলাদেশ সরকারের কাছে থাকবে আপনারা বন্যপ্রাণী বিভাগকে আলাদা করে দেন।”

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ বলেন, “আমাদের দেশে বন্য প্রাণী দেখাশোনার জন্য যে আলাদা জায়গা দরকার, তা এখনো সঠিকভাবে গড়ে ওঠেনি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক পাখি ও অন্যান্য প্রাণীদর জন্য গড়ে তোলা হয়েছে। আমরা বন্য প্রাণীর জন্য যে সিদ্ধান্ত গুলো নিই, তা পরিকল্পিত ভাবে নিতে পারি না। যার জন্য সঠিক ভাবে বন্য প্রাণী সংরক্ষণও হয়ে উঠছে না। আমাদের বন্য প্রাণী সম্পর্কে সঠিক ডাটা নেই, ফলে তাদের পরিচর্চাও করা যাচ্ছে না। বর্তমানে অনেক প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার রয়েছেন, যারা ছবি তোলার জন্য প্রাণীদের বাস্থাসনে চলে যায়, এটা খুবই ক্ষতিকর। বন্য প্রাণী গবেষণার জন্য নতুন দিক উদ্ভাবন করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামেও আমাদের গবেষণা বাড়াতে হবে। সচেতনতা ছাড়া আমরা বন্য প্রাণী সংরক্ষণের করতে পারবো না। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে। ”

এছাড়াও সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মনিরুল হোসেন খান, অধ্যাপক ড. মো. কামরুল হাসান, ডিপ ইকোলজি এন্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান, সংগঠনের জাবি শাখার সভাপতি মোসাদ্দেকুর রহমানসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

আপনার মন্তব্য

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.