স্পোর্টস ডেস্ক: বাংলাদেশের ক্রিকেটে হঠাৎ যেন একটা ঝড়ই বয়ে গিয়েছিল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডের পর হুট করে অবসরের ঘোষণা দেন তামিম ইকবাল।
জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়কের এমন অবসর সবার জন্যই এসেছিল চমক হিসেবে। পরে অবশ্য অবসর ভেঙে ফিরেছেন অভিজ্ঞ ওপেনার। অবসর নেওয়ার পরদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে দেখা করেন তিনি।
এরপর দেড় মাসের ছুটি নিয়ে ক্রিকেটে ফেরার কথা জানান তামিম। তখন তার সঙ্গে ছিলেন সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিও পোস্ট করেন তিনি। অনেকেই মনে করেন তামিমকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন মাশরাফি। যদিও তিনি বলছেন, ব্যাপারটি তেমন নয়।
বুধবার রাজধানীতে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানের পর মাশরাফি বলেন, ‘একটু ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। যেটা হয়েছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তামিমের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছেন। এটা পুরোপুরি উনার ইচ্ছা ছিল। উনি তামিমের সঙ্গে কথা বলেছেন। উনি কী বলেছেন সেটা তো ব্যক্তিগতভাবে তামিমের সঙ্গেই কথা হয়েছে। আমি নিশ্চিত যে, ইতিবাচক কথাই হয়েছে। সেই কারণেই তামিম আবার ক্রিকেটে ফিরেছে। এখানে অন্য কাউকে মেশানো ঠিক হবে না। এটা একমাত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা ছিল, তামিমের সঙ্গে কথা বলার। সেটাই হয়েছে। বাকিটা তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও তামিমের মধ্যেই কথা হয়েছে। ’
৩৪ বছর বয়সে ক্রিকেটকে বিদায় বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিম। সামনে বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপের মতো দুটি বড় টুর্নামেন্টও ছিল। এই বয়স মাশরাফির কাছে পারফর্ম করার। তামিমের অবসরকে ইঙ্গিত করে তিনি বলছেন, কখনো কখনো মানুষের অন্য কারো সাহায্যের প্রয়োজন হয়।
মাশরাফি বলেন, ‘আমার কথাটা বলেছি যে ৩৪ বছর বয়স আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পারফর্ম করার সময় অনেকের ক্ষেত্রে। বিরাট কোহলি করছে না পারফর্ম? ওর থেকে বেশি বয়স। ও না খেলার পেছন (অবসর) কারণ কী আমি জানি না। মূল কথা হচ্ছে যে আমার কাছে যেটা মনে হয় তামিমের ওপর কী গেছে, আমি এর থেকে বেশি আপসেট, আমি জানি না তামিম আমার সঙ্গে এত কিছু শেয়ার করেনি। আমি বেশি আপসেট হয়েছি তামিমকে দুর্বল দেখে। ’
‘কারণ একটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা ক্রিকেটার, ওর পক্ষেও তো অনেকে কথা বলছে। বলছে না? তো সিম্পলি আপনি এটুকু লড়াই করতে পারবেন না, এমনটা আমার মনে হয়নি। কিন্তু কখনো কখনো মানুষের সাহায্য প্রয়োজন হয়। কখনো কখনো মানুষ ভেঙে পড়ে তখন মনে হয় কারো সমর্থন দরকার। আমি এক্ষেত্রে বলবো তামিম খুব ভাগ্যবান যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে ডেকেছেন, কথা বলেছেন এবং ক্রিকেটে ফিরিয়ে এনেছেন। ’
১৫ বছরের বেশি সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন তামিম। এই সময়ে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে করেছেন ১৫ হাজারের বেশি রান। মাশরাফি অবশ্য বলছেন, একটা সময় পর আর এসব মনে রাখবে না কেউ। আপাতত মানসিকভাবে শক্ত ও ইনজুরি কাটিয়ে তামিমকে ভালোভাবে ফেরার চেষ্টার পরামর্শ দিয়েছেন মাশরাফি।
তিনি বলেন, ‘এই সৌভাগ্য সবার হয় না। ও ১৫ হাজার রান করেছে, দেশের জন্য অনেক কিছু করেছে এটা সত্যি; কিন্তু শেষে এসে একটা সময় কেউ এগুলো মনে রাখবে না। তামিম যে বয়সে আছে, ওর পারফর্ম করার সময়। দেশকে যখন সেরা কিছু এনে দেবে, তখনই যদি সরে যায়; আমি মনে করি শুধু পারিপার্শ্বিকতার চাপই না, তার মানসিকভাবেও শক্ত থাকা উচিত। ’
‘আমি মনে করি তামিমের শতভাগ ফিট হয়ে আসা উচিত; একই সঙ্গে মানসিক ওরকম প্রস্তুতি থাকা উচিত যে ও পারফর্মার ছিল, পারফরম্যান্সই তার হয়ে কথা বলবে। কোচ তার পক্ষে আছে, ক্রিকেট বোর্ড তার পক্ষে আছে, নাকি আমরা ওদের পক্ষে আছি এগুলো ওর মতো ক্রিকেটারের কাছে আশা করবো না যে কে ওর পক্ষে আছে এটা নিয়ে চিন্তা করবে। আমরা চিন্তা করবো ও পারফর্মার, পারফর্ম করবে; অটোমেটিক্যালি সবকিছু তার পক্ষে থাকবে। ’
তামিমের ইনজুরি নিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘এখন যে জিনিসটা হচ্ছে ওর ইনজুরি ওকে ভোগাচ্ছে। ও পারফর্ম করছে না, কেন করছে না? তার কারণ হচ্ছে ইনজুরি। তাহলে কী করা উচিত? ওর ইনজুরিটা ঠিক করে আসা উচিত। ওই যে বললাম ডুয়িং দ্য রাইট থিংস। ওর এখন উচিত ইনজুরি নিয়ে চিন্তা করা। ফিট হয়ে আসলে আমি নিশ্চিত ও অটোমেটিক রান করবে আর আগের পরিস্থিতিতে ফিরে আসবে। ’