নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ কার্যালয়ে শনিবার (১৮ নভেম্বর) সকাল ১০টায় ব্যক্তিগত গাড়িতে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম বিক্রির দলীয় কর্মসূচি উদ্বোধন করে প্রথম ফরমটি তিনিই কিনলেন। ফরম বিক্রির কর্মীরা জানান, আপাতত তিনি ফরম নিয়েছেন, গোপালগঞ্জ-৩ আসনের জন্যে। প্রধানমন্ত্রীর এর পরের কর্মসূচি ছিল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত। এই কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে যান সরকারি গাড়িতে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় কাজ ছাড়া কোন সরকারি সুবিধা নিচ্ছেন না।
শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) বিকাল ৩টায় আওয়ামী লীগের তেজগাঁও কার্যালয়ে ছিল দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভা। তফসিল ঘোষণার পর দলের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ এই সভায় সভাপতিত্ব করেন শেখ হাসিনা। এখানেও প্রধানমন্ত্রী আসেন ব্যক্তিগত গাড়িতে। নির্বাচনের খুটিঁনাটি নানা বিষয় নিয়ে তিনি টানা বক্তৃতা করেন কিন্ত সরকারি টেলিভিশন বিটিভি কোন লাইভ সম্প্রচার করেনি। বিটিভির প্রতিবেদক জিহাদুর রহমান জিহাদ জানান, তফসিল ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সংগ্রহ নিয়ে বিটিভির কিছু পরিবর্তন এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর যেকোন কার্যক্রম অন্য গণমাধ্যম যেমন কাভার করে, তারাও সেভাবে করবে। এখানে সরকার প্রধান হিসাবে আলাদা কোন কাভারেজ তিনি পাবেন না। এটা আসলে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা।
এর আগে গত ৩১ অক্টোবর গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আরপিও অনুযায়ী নির্বাচনের তফসিল হবে। তারপর থেকে কোনো মন্ত্রী ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবেন না। সুযোগ-সুবিধাও পাবে না। কিন্তু সরকারি ওয়ার্ক চলবে। তিনি জানান, প্রার্থী হওয়ার পর, গণভবনে কোন কনফারেন্স তিনি করবেন না। তখন কোন সংবাদ সম্মেলন করতে হলে, আওয়ামী লীগের আলাদা কোন অফিসে করা হবে। তিনি আরও বলেন, ‘তফসিলের পর থেকে ভোটের ফলাফলের সরকারি গেজেটে প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত ‘নির্বাচন-পূর্ব সময়’। এই সময়ে যে সরকার থাকবে তাদের কার্যক্রমে বেশ কিছু পরিবর্তন আসবে এবং ক্ষমতাও অনেক কমে আসবে। নির্বাচন-পূর্ব সময়ে সরকার কোনো নীতি-নির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেবে না। একই সঙ্গে নতুন কোনো উন্নয়ন প্রকল্পও গ্রহণ করবে না। সরকারের যেসব মন্ত্রী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন, তাদের সুযোগ-সুবিধা কমে আসবে। বিশেষ করে নির্বাচনী প্রচারের তারা কোনো প্রোটোকল পাবেন না। তিনি আরও বলেন, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও কানাডার মতো সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশে যেভাবে নির্বাচনকালীন সরকার থাকে, সেভাবে চলবে। অর্থাৎ নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে রুটিন ওয়ার্ক পালন করব, যেন সরকার অচল হয়ে না যায়।’
এরই মধ্যে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, যেহেতু তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এখন থেকে রুটিন কাজ করে যাবে। নির্বাচনকালীন যে সরকার থাকে তারা পলিসি ডিসিশন নেয় না, যেন একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকে। তারা এমন কিছু করবে না, যা জনগণ সরকারকে ভোট দিতে আকৃষ্ট করে। তিনি সংবিধানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর ৫(২) অনুচ্ছেদে বলা আছে, নির্বাচন কমিশন যে কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় যে কোনো দায়িত্ব পালনে বা সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দিতে পারবে। ৪৪(ঙ) অনুচ্ছেদ অনুসারে, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে ফলাফল ঘোষণার পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ছাড়া বিভাগীয় কমিশনার, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, ডেপুটি কমিশনার, পুলিশ সুপার এবং তাদের অধস্তন কর্মকর্তাকে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া বদলি করা যাবে না। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনবোধে যে কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলির ব্যবস্থা নিতে পারবে। ‘নির্বাচন কমিশন এ সময় নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১’ প্রয়োগ করতে পারবে।