দুই বছরেও ইভটিজিংয়ের অভিযোগের বিচার হয়নি ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে

0

ওসমান সরদার, জাবি প্রতিনিধি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) এক ছাত্রীকে পোশাক ও শরীর সম্পর্কে অশ্লীল মন্তব্য এবং উত্ত্যক্তের ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের দুই প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন ভুক্তভোগী ঐ ছাত্রী। ২০২১ সালের ৮ জুলাই ভুক্তভোগী ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। তবে অভিযোগের পর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও হয়নি বিচার।

ইভটিজিংয়ের ঘটনায় মুল অভিযুক্ত ছিলেন-রসায়ন বিভাগের ৪৪ ব্যাচের ছাত্র দেলোয়ার হোসেন। তিনি বর্তমানে শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক ছাত্র। তার সহযোগী অপর অভিযুক্ত মার্কেটিং বিভাগের একই ব্যাচ ও হলের ছাত্র আবুল কালাম আজাদ। আজাদ শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি।

লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী ছাত্রী ওই সময় জানান, ২০২১ সালের ৮ জুলাই জরুরি প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের দিকে যাওয়ার সময় চৌরঙ্গী নামক জায়গায় দেলোয়ার ও আজাদ তার পথ রোধ করে এবং পোশাক সম্পর্কে অশ্লীল কথাবার্তা বলেন। সে সময় ঐ ছাত্রীর বন্ধু এই ঘটনার প্রতিবাদ করলে তাদের ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দেয় তারা।’

এদিকে অভিযোগের দুই বছর পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি বিচার প্রক্রিয়া। বিচার দাবি ওই ছাত্রী বলেন, সুষ্ঠু বিচার চেয়ে আমি অভিযোগ দিয়েছি৷ অভিযোগ দেয়ার দুই বছর পেরিয়ে গেলেও আমি কোন বিচার পাইনি৷ আমার পড়াশোনা শেষ হয়ে যাচ্ছে, আর অভিযুক্তের পড়াশোনা তো শেষ হয়েই গেছে। তাহলে আর কবে এর বিচার করবে? আমার সাথে হওয়া এই অন্যায়ের সুষ্ঠু বিচার চাই।’

বিচার প্রক্রিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ. স. ম. ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, যিনি অভিযোগ করেছেন তাকে আমরা ডেকেছিলাম, কিন্তু উনি আসেননি।

তবে এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, ‘এটা পুরোপুরি মিথ্যা কথা। আমাকে একবার ডেকেছিল, আমি গিয়েছিলাম। আমার স্টেটমেন্ট দিয়ে এসেছি। বেশ কিছুদিন পরে একজন সহকারী প্রক্টর আমাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি দেখা করতে পারবা? কিন্তু ওইদিন আমি বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে টিকেট কেটে রেখেছিলাম।

তাই স্যারকে বিষয়টি জানাই। তখন স্যার বলেন, আচ্ছা সমস্যা নাই৷ তুমি অভিযোগ প্রত্যাহার করতে চাইলে সশরীরে উপস্থিত হতে না পারলেও নিজ হাতে প্রত্যাহারপত্র লিখে আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দিও। তবে আমি আমার ভাইয়ের সাথে আলোচনা করে অভিযোগ প্রত্যাহার করবো না বলে স্যারকে জানাই এবং এর সুষ্ঠু বিচার চাই বলেও জানিয়েছি। পরে আমার সাথে আর যোগাযোগ করা হয়নি। তাহলে কিভাবে প্রক্টর অফিস বলেন আমি যাইনি? অভিযোগ প্রত্যাহার করতে চাইলে আমি নিজে করতাম। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। একজন সহকারী প্রক্টর নিজে আমাকে অভিযোগ প্রত্যাহারের ব্যাপারে বলেন, এটা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। এতদিনেও বিচার করতে না পেরে এখন উল্টা মিথ্যাচার করা হচ্ছে।’

ভুক্তভোগী অভিযোগপত্র প্রত্যাহার করেননি- এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রক্টর বলেন, “এটা ঠিক বলতে পারবো না। আমার মনে নেই। অনেক আগের ঘটনা তো, আমাকে একটু ডিটেইলস খবর জেনে বলতে হবে। আমার যতটুকু মনে আছে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রক্টরদের দিয়ে একটি কমিটি করা হয়েছিল। সেই কমিটি কয়েকটি মিটিংয়েও বসেছিল। বিষয়টি মীমাংসা হয়েছিল কি না তা আমার জানা নেই।”

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দেলোয়ার বলেন, “২০২১ সালে করোনার কারণে সব বন্ধ ছিল। ক্যাম্পাস বন্ধ ছিল। আমি এই ঘটনার সাথে যুক্ত না। রাজনৈতিকভাবে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে একটি পক্ষও মিথ্যাচার করছে।”

আপনার মন্তব্য

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.