ফাইনাল পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত জাবির দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী

0

ওসমান সরদার, জাবি প্রতিনিধি: ক্যম্পাসের বাইরে থেকে শ্রুতিলেখক নেওয়ায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে ফাইনাল পরীক্ষা দিতে দেয়নি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুমতাহানা মৌ । তার এমন অমানবিক আচরণে ক্ষুব্ধ ক্যম্পাসের শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীসহ অন্যান্যরা।

গত ৩০ অক্টোবর এই ঘটনা ঘটে। ওইদিন প্রথম বর্ষের ১০১ নং কোর্সের ফাইনাল পরীক্ষা ছিল।

ভুক্তোভোগী শিক্ষার্থীর নাম রোজিনা আক্তার। তিনি ৫০তম ব্যাচের (২য় বর্ষ) শিক্ষার্থী। ওইদিন তার ১০১ নং কোর্সের রিটেক পরীক্ষা ছিল। এখন ওই শিক্ষার্থীকে এই কোর্সে স্পেশাল পরীক্ষা দিতে হবে। ফলে অতিরিক্ত ১৫ হাজার টাকা তাকে বহন করতে হবে।

মুমতাহানা মৌ বলেন, ওই শিক্ষার্থীর একটা কোর্সে একটু ঘাপলা ছিল। সেই ওই পরিক্ষায় দিতে এসেছিলো। এখানে সে তেলেসমাতি করেছে। ক্যম্পাসের বাইরে থেকে শ্রুতিলেখক নেওয়ার নিয়ম নেই এবং শ্রুতিলেখককে শিক্ষার্থী থেকে লেখাপড়ায় ছোট হতে হবে। ওই শিক্ষার্থীকে দেখেই বুঝা যাচ্ছিল সে অনেক বড়। ফলে সে ধরা খেয়েছে। তবে আমরা ক্যম্পাসের শ্রুতিলেখক জোগাড় করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছি।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই শিক্ষার্থী ২ ঘন্টা পরিক্ষার হলে বসে ছিলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নিয়ম সম্পর্কে ওই শিক্ষার্থী অবগত ছিলো না। তবে ওই শ্রুতিলেখক ভুক্তোভোগী শিক্ষার্থীর ব্যাচমেট। তিনি একটি কলেজে ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত। অন্যদিকে ক্যম্পাসে শ্রুতিলেখক না পাওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী বাইরে থেকে শ্রুতিলেখক নিয়ে পরিক্ষা দেন। নিয়মের না থাকলেও অনেক শিক্ষক বিষয়টিতে সম্মতি দেন।

তবে এই বিষয়ে ভুক্তোভোগী শিক্ষার্থী প্রথমে ভয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি। তবে পরে ফোন দিয়ে ওই শিক্ষার্থী জানান, ‘আমার জন্য শিক্ষকরা অনেক চেষ্টা করেছে। একজন শ্রুতিলেখক নিয়ে এসেছিলো আমার প্রস্তুতি ভাল না থাকায় আর পরিক্ষা দেইনি।’
এদিকে ওই শিক্ষিকাকে সাংবাদিকরা ফোন দিলে তিনি অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। তিনি বলেন, ‘তোমাকে এই তথ্য কে দিলো, তুমি তো সবে ৫০ ব্যাচ ক্যাম্পাসে আসছো, আরেকটু ক্যম্পাসে থাকো, একজন শিক্ষককে ফোন দেওয়া আগে তোমার ভাবা উচিত ছিল ’। এসব প্রশ্ন করে বিব্রত করার চেষ্টা করেন।

৪৭ তম ব্যাচের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমান ধ্রুব বলেন, মানবিক দিক বিবেচনা করে ওই শিক্ষার্থীকে পরিক্ষা দেওয়ানো যেত। এ সময় সব ৫১ ব্যাচের পরিক্ষা চলছে ফলে ক্যম্পাসে শ্রুতিলেখক পাওয়া কঠিন। আমাদের প্রতি শিক্ষকদের আরেকটু মানবিক হওয়া উচিত।

ফিজিক্যালি-চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (পিডিএফ) জাবি শাখার সভাপতি আনিকা তাবাসসুম বলেন, শ্রুতিলেখক পাওয়া অনেক কষ্টের। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মেই সমস্যা আছে। নিয়মে জুনিয়র ব্যাচকে দিয়ে পরিক্ষা দিতে হবে বলা হয়েছে। তাহলে নবীন শিক্ষার্থীরা তাদের জুনিয়র কোথায় পাবে? মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাকে সতর্ক করে পরিক্ষাটা নেওয়া উচিত ছিলো।

বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক শামীমা সুলতানা বলেন, প্রশাসনের বিকল্প ব্যবস্থা করে দেওয়া উচিত ছিলো। আমি অসুস্থ থাকায় বিষয়টি জানানো হয়নি। আমি থাকলে একটি ব্যবস্থা করে দিতাম। এছাড়াও তিনি শ্রুতিলেখকের অধ্যাদেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের এখনও জুনিয়র ব্যাচ ক্যম্পাসে আসে নি। তাহলে তারা জুনিয়র কোথায় পাবে। এই নিয়ম পরিবর্তন হওয়া দরকার।

কলা ও মানবিকী অনুষদের ডীন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট বিষয়টি আমি অবগত নই। তবে শুনে যা মনে হলো বিষয়টি সমাধান করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন লেকচারারই যথেষ্ট ছিলো।’

এ ব্যাপারে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায় নি।

আপনার মন্তব্য

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.