বিতর্কিত ভোটের ‘সহযোগী’ কর্মকর্তাদের কপাল পুড়ছে, নতুন নেতৃত্বের আ.লীগ চায় বিএনপি

সহযোগীদের খবর

0

ইতিহাস প্রতিদিন ডেস্ক : বিতর্কিত ভোটের ‘সহযোগী’ কর্মকর্তাদের কপাল পুড়ছে-এটি দৈনিক সমকালের প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, সংসদের শেষ তিন নির্বাচন নিয়ে রয়েছে বিস্তর বিতর্ক। এবার সেসব নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের কপাল পুড়তে যাচ্ছে। বারবার প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসাতে ভূমিকা রাখা কর্মকর্তাদের তালিকা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই মধ্যে বিভাগীয় কমিশনার ও রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসকের (ডিসি) তালিকা প্রস্তুত হয়ে গেছে। এখন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) তালিকা তৈরির কাজ চলছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের কয়েক মাসের মাথায় বিতর্কিত তিন নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সহায়তা দেওয়া কর্মকর্তাদের খোঁজে নামল সরকার।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, এসব কর্মকর্তা বারবার বিতর্কিত নির্বাচন করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখার সহযোগী। তাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে সরানো হচ্ছে। ভবিষ্যতেও জুটবে না বড় পদ। বিতর্কিত নির্বাচন আয়োজনে জড়িতদের বিচারের দাবিও উঠেছে। বিচার হলে তালিকাভুক্ত কর্মকর্তাদের শাস্তিও পেতে হবে।

বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসির ২৩ পৃষ্ঠার দুটি আলাদা তালিকা হাতে পেয়েছে সমকাল। তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এতে তিন নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ২৪ বিভাগীয় কমিশনারের নাম রয়েছে। যারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালে বিভাগীয় কমিশনার ছিলেন, তারা এরই মধ্যে অবসরে গেছেন। গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় দায়িত্বে থাকা চার বিভাগীয় কমিশনার এখনও পদে আছেন। তারা হলেন চট্টগ্রামের তোফায়েল ইসলাম, খুলনার মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ, রাজশাহীর ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর ও সিলেটের আবু আহমেদ ছিদ্দিকী। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নিয়োগ পাওয়া তিন বিভাগীয় কমিশনারকে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সরিয়েছে। একজনকে আওয়ামী লীগ সরকারই অন্যত্র বদলি করে।

রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ২০৮ জেলা প্রশাসকের নাম রয়েছে তালিকায়। ৬৪ জেলায় তিন নির্বাচনে ১৯২ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা ছিলেন। তবে তপশিল ঘোষণার পর তিন নির্বাচনে ১৬ জেলা প্রশাসকের বদলির কারণে রিটার্নিং কর্মকর্তার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২০৮।

২০১৪ সালের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ৬৭ জেলা প্রশাসকের ৪৩ জন অবসরে গেছেন। ওই নির্বাচনের বাকি রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পরের দুই নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তারা এখনও চাকরিতে আছেন। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা সবাইকে সরানো হয়েছে। আগের দুই নির্বাচনের কয়েকজন রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে। বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে দু’জনকে।

২০০৯ সালে ক্ষমতায় ফেরার আড়াই বছর পর সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে আওয়ামী লীগ। দলীয় সরকারের অধীনে ভোটের বিরোধিতা করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জন করে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো।

ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১২৫, জাতীয় পার্টি (জাপা) ২২, জাসদ ২, ওয়ার্কার্স পার্টি ২, জেপি ১ এবং তরীকত ফেডারেশন একটি আসনে বিনা ভোটে জয়ী হয়।

দৈনিক দেশ রূপান্তরের প্রধান খবর ‘নতুন নেতৃত্বের আ.লীগ চায় বিএনপি’। প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের মাঠের রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ দেখছে না বিএনপি। দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগের পুরনো নেতৃত্ব রাজনীতিতে ফিরতে চাইলেও সেই সুযোগ ছাত্র-জনতা দেবে না। বিএনপিও তাদের এ অবস্থানের পক্ষে। তবে ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে নতুন নেতৃত্বের আওয়ামী লীগকে হয়তো আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হতে পারে।

বিএনপি নেতাদের ধারণা, মাঠের রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ পেলে আওয়ামী লীগ সেটা হারাতে চাইবে না। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্টের মতো বড় ঘটনার পরও আওয়ামী লীগ নির্বাচন বর্জন করেনি বলে উল্লেখ করেন তারা।

গণ-অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ বিদেশে চলে গেছেন, কেউ আত্মগোপনে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ফলে সাংগঠনিক কার্যক্রম পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে।

নানা ঘটনাপ্রবাহে এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফেরা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে। যদিও গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের ফেরার আর কোনো সুযোগ নেই। তারা দলটিকে নিষিদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ১০ নভেম্বর রাজধানীর জিরো পয়েন্টে গণজমায়েত কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘গণহত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের বাংলাদেশে রাজনীতির অধিকার নেই।’ বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না বলেও জানান তিনি।

তবে দেড় দশক আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা বিএনপি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে একমত নন। দলটি বলছে, তারা কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধের পক্ষে নয়। তবে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে গণহত্যার সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিচারে জোর দেওয়ার পক্ষে বিএনপি। আর অনুশোচনার পর নতুন নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ তৈরি হলেও হতে পারে।

পুরনো নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে কেন ফেরার সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে না সে বিষয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, অভ্যুত্থানের সময় আওয়ামী লীগ সরকারের এমন হত্যাকাণ্ডের পরও দলটির কোনো নেতা এখনো দুঃখ প্রকাশ করেননি। তাদের অনুশোচনাও নেই। দলটির কোনো পর্র্যায়ের নেতাকর্মী প্রকাশ্যে স্বীকার করেননি যে, গত ১৫ বছরে যা হয়েছে, তা খুব খারাপ হয়েছে। তারা বলেননি, তাদের নেত্রী শেখ হাসিনা এসব ঘটনার জন্য দায়ী। হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে দলটির কোনো পর্যায়ের নেতা পদত্যাগও করেননি। বরং দলটির পক্ষ থেকে এখনো বলা হচ্ছে, অভ্যুত্থান ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিরাট ষড়যন্ত্র।

বিএনপি মনে করছে, নিজেদের কৃতকর্মের জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চাইলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে মাঠের রাজনীতিতে ফেরা আওয়ামী লীগের জন্য কঠিন হবে। মাঠে ফিরতে হলে আওয়ামী লীগে নতুন নেতৃত্ব আনতে হবে। ওই নেতৃত্বের গ্রহণযোগ্যতাও নির্ভর করছে জনগণ তাদের কতটুকু গ্রহণ করবে, তার ওপর। তবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হলে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিলে অন্যান্য দলের মতো সুযোগ-সুবিধা চাইবে। সে ক্ষেত্রে নতুন করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর মতো পরিস্থিতিতে দলটি যেতে পারে।

আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে কি না তা নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়েছে। সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আমরা রাজনৈতিক দলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাইনি। বিএনপি এটা করেছে, বলেছে, সব রাজনৈতিক দল অবশ্যই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। সুতরাং তারা ইতিমধ্যে রায় দিয়ে দিয়েছে। আমরা দেশের একটি প্রধান দলের মতামত অগ্রাহ্য করতে পারি না।’ তাহলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণে আপনার কোনো আপত্তি নেই এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি রাজনীতিবিদ নই যে এ দল বা অন্য দল বেছে নেব। আমি রাজনীতিবিদদের ইচ্ছা বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করছি।’

প্রধান উপদেষ্টার এ বক্তব্যের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের কাছ থেকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া আসে। বিচারের আগে আওয়ামী লীগকে ‘পুনর্বাসনের’ চেষ্টা হলে ‘দ্বিতীয় বিপ্লবের’ হুঁশিয়ারিও দেন একাধিক নেতা।

দৈনিক প্রথম আলোর প্রথম পাতার খবর ‘নির্বাচন যত দেরিতে হবে, ততই ষড়যন্ত্র বাড়বে: তারেক রহমান’। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে নির্বাচন যত দেরিতে হবে, ততই ষড়যন্ত্র বৃদ্ধি পাবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, যার বিরুদ্ধে দেশের লক্ষ কোটি মানুষ এক যুগের বেশি সময় ধরে আন্দোলন করেছে, সেই স্বৈরাচার কিন্তু বসে নেই।

গতকাল শনিবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা টাউন ফুটবল মাঠে আয়োজিত জেলা বিএনপির সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন তারেক রহমান। তিনি আরও বলেন, ‘জনগণের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারকে হটিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই স্বৈরাচার তাদের দেশি-বিদেশি প্রভুদের সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে।’ গতকাল বিকেলে রাজশাহী বিএনপির কর্মশালায়ও ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন তারেক রহমান।

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সম্মেলনে দেওয়া তারেক রহমানের বক্তব্যে প্রাধান্য পেয়েছে নির্বাচন প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন যত দেরিতে হবে, এই দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসুবিধা, এই দেশের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাব্যবস্থা, এই দেশের কৃষকদের সমস্যা, এই দেশের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সমস্যা, এই দেশের বিচারব্যবস্থার সমস্যা, এই দেশের প্রশাসনের সমস্যা, যতগুলো সমস্যা এই স্বৈরাচার করে গিয়েছে, তা আরও বৃদ্ধি যাবে। একমাত্র একটি নির্বাচনের মাধ্যমেই সম্ভব ধীরে ধীরে দেশের সমস্যাগুলোর সমাধান করা।’

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে সক্ষম বলে মন্তব্য করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে সক্ষম হলেই প্রকৃত ব্যক্তিগুলো নির্বাচিত হয়ে আসতে পারবেন। যাঁরা সত্যিকার অর্থেই জনগণের কথা বলবেন, জনগণের স্বার্থ নিয়ে চিন্তা করবেন। প্রতিটি সেক্টরের সমস্যা সমাধানের বিষয়ে চিন্তা করবেন। একটি প্রকৃত নির্বাচনের মাধ্যমে যদি প্রকৃত জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হন, তাহলেই একমাত্র সম্ভব।

‘চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে সিএফও নিয়োগ’-এটি দৈনিক যুগান্তরের প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, বিধি লঙ্ঘন করে প্রায় ৪ বছরে আগে সরকারি মার্চেন্ট ব্যাংক ‘জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লি.’র বর্তমান সিএফও শহীদুল হককে নিয়োগ দেওয়া হয়। তার আমলেই বেক্সিমকো শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে ৪৭৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় এই প্রতিষ্ঠানকে।

নিজের আত্মীয় এই সিএফওকে নিয়োগ দিতে বিধিবিধান এবং নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত তোয়াক্কা করেননি জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. এসএম মাহফুজুর রহমান। তিনি (মাহফুজুর রহমান) নিজেও সালমান এফ রহমানের প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো এবং এস আলমকে ঋণের নামে একচেটিয়া লুটপাটের সুযোগ করে দিয়ে জনতা ব্যাংককে পঙ্গু করে দিয়েছেন। বিতরণ করা ঋণের ৬১ শতাংশই এখন খেলাপি।

জনতা ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি হচ্ছে জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লি. (জেসিআইএল)। এই কোম্পানির সব স্তরের লোকবল নিয়োগ কর্তৃপক্ষ জনতা ব্যাংকের পর্ষদ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং জনতা ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

যুগান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জেসিআইএলের সিএফও (চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার) পদে নিয়োগের জন্য ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় জনতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। প্রার্থীর যোগ্যতা হিসাবে চাওয়া হয় ৩-৪ বছরের স্নাতকসহ ইকনোমিক / ফাইন্যান্স / ব্যাংকিং / অ্যাকাউন্টিং / ব্যাংক ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর এবং সঙ্গে এফসিএ / এফসিএমএ / এফসিসিএ।

দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রথম পাতার খবর ‘শেখ পরিবারের প্রশ্রয়ে বেপরোয়া ছিল পাচারকারীরা’। খবরে বলা হয়, দেশের সাধারণ মানুষের রক্ত ও ঘামে ভেজানো টাকা বিদেশে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার। এ জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ের পাশাপাশি ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে অর্থপাচারের অনুসন্ধান ও তদন্তের ক্ষমতাপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো। পাচারকারীদের পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার চেষ্টার পাশাপাশি বিদেশে অপ্রদর্শিত অর্থ ও সম্পদের বিপরীতে তাদের দেশে থাকা সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পাচারে শেখ পরিবারের প্রশ্রয়

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এর পরই পতিত সরকারের দুর্নীতির নানা দিক বের হতে থাকে। তথ্য-উপাত্ত বলছে, দলটি ক্ষমতায় থাকাকালে প্রায় ১৬ বছরে অনিয়ম, দুর্নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতার সব সীমা ছাড়িয়ে যায়। বিশেষ করে শেখ হাসিনাকে সামনে রেখে শেখ রেহানা ও পুরো শেখ পরিবারের সদস্যরাও বেপরোয়া ছিলেন।

তাদের আত্মীয়-স্বজনের নাম ভাঙিয়েও অনেকে অনিয়ম-দুর্নীতি করে টাকা কামিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর ওই সব টাকা বিদেশে পাচার করেছে। খোদ শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সাবেক স্বামী খন্দকার মাশরুর হোসেন একবার পাচারের টাকাসহ দুবাইয়ে আটক হওয়ার ঘটনাও ঘটে। এ রকমভাবে অনেক দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর আমলা, রাজনীতিবিদ, এমপি, মন্ত্রীও ওই সময় দুর্নীতির টাকা তাদের প্রশ্রয়ে পাচার করেছিলেন বলে আলোচনা রয়েছে।

যারা বিদেশে আজকে শীর্ষ ধনী হয়েছেন, আলাদা সাম্রাজ্য গড়েছেন, তারা সরাসরি শেখ পরিবারের প্রশ্রয় পেয়েছিলেন বলে প্রচার রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় যত তদন্ত, অনুসন্ধান হচ্ছে—এ বিষয়গুলো নজরে আনছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এনবিআর কী করছে?

এনবিআরের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইসি সূত্র জানায়, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আমলা, পুলিশসহ সরকারি চাকরিজীবী, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান-পরিচালক, ঊর্ধ্বতন ও মাঝারি স্তরের কর্মকর্তাদেরও অর্থপাচারের তথ্য হাতে এসেছে। কর ফাঁকিবাজ ও অর্থ পাচারকারী এমন সন্দেহজনক প্রায় ২০০ ব্যক্তি ও তাদের পরিবারকে নিয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে সিআইসি। দেশের বাইরে তাদের সম্পদ আছে কি না জানতে বিভিন্ন দেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে।

ঢালাও মামলা নিয়ে দৈনিক ইত্তেফাকের প্রধান শিরোনাম ‘আসামি চেনে না বাদীকে, বাদী চেনে না আসামিকে’। খবরে বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম ১০০ দিনে যে কয়েকটি ঘটনা আলোচনার শীর্ষে স্থান করে নিয়েছে, এর অন্যতম ‘ঢালাও মামলা’। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দেশ জুড়ে এ পর্যন্ত হওয়া ঢালাও মামলায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঘটনা সম্পর্কে আসামিদের সিংহভাগ কিছুই জানেন না। বাদী চেনেন না আসামিকে, আসামিরাও চেনেন না বাদীকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বাদী নিজেও ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। এমনও অভিযোগ উঠেছে, শত শত মানুষকে আসামি করে মামলা দিতে বাদীকে বাধ্য করা হয়েছে, কখনো দেখানো হয়েছে টাকার প্রলোভনও।

পূর্বশত্রুতা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করা এবং চাঁদাবাজি ও হয়রানি করতে অনেককে আসামি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। মামলায় কাদের আসামি করা হবে, সেক্ষেত্রে বাদীর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই; নিয়ন্ত্রণ থাকে অন্যদের হাতে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীসহ সরকারবিরোধীদের বিরুদ্ধে ‘গায়েবি’ মামলা দিত পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতারা। এখন দেখা যাচ্ছে, হত্যা মামলায় ঢালাওভাবে আসামি করা হচ্ছে ‘ইচ্ছেমতো’।

সরকার ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাদের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, এসব মামলায় নিরীহ কাউকে যেন হয়রানি না করা হয়, প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পাওয়া না গেলে কাউকে যেন গ্রেফতার করা না হয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে অনেককেই এসব মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে বা এখনো করা হচ্ছে। আবার ঘটনার সঙ্গে দূরতম সম্পৃক্ততা না থাকলেও আসামি হয়ে নিরপরাধ অনেকে গ্রেফতারের ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

পুলিশের নবনিযুক্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম গতকাল শনিবার বলেছেন, ‘৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে দায়ের হওয়া মামলাগুলো যথাযথভাবে তদন্ত করতে হবে। কোনো নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা যাবে না, কোনো পুলিশ সদস্যকেও অযথা ভিকটিমাইজ করা হবে না। নিরীহ কারো নামে মামলা হলেও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’

অভিযোগ উঠেছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে মামলা করার আগেই টার্গেটকৃত ব্যক্তির কাছে চাঁদা হওয়া হয়েছে। চাঁদা না দিলে মামলায় আসামি করা হয়েছে, আর চাঁদা দিলে আসামি করা হয়নি। আবার মামলার পর আসামির তালিকা থেকে নাম কাটাতেও লাখ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে, কিংবা এখনো নেওয়া হচ্ছে। কোথাও কোথাও আবার মামলা দেওয়ার পাশাপাশি অনেকের বাড়ি, জমি, প্লট, দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও দখল করে নেওয়া হয়েছে। লুট করা হয়েছে মালামাল। আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। যার প্রতিষ্ঠান লুট বা বেদখল করা হয়েছে, উলটো আবার তার বিরুদ্ধেই মামলা দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’-এর সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম ইতিমধ্যে একাধিকবার বলেছেন, ঢালাও মামলা দিয়ে বাণিজ্য করার বহু অভিযোগ তারা পেয়েছেন। মামলা দিয়ে বাণিজ্য করা যাবে না বলেও তিনি সতর্ক করেন।

‘প্রশ্নের মুখে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা’-এটি দৈনিক নয়া দিগন্তের প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর চ্যানেলকে ঘিরে গড়ে উঠেছে দেশের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সব স্থাপনা। কিন্তু বন্দরের টার্মিনালগুলো বিদেশীদের হাতে তুলে দেয়ার ক্ষেত্রে সেটা বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে কি না সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বন্দর ব্যবহারকারী একাধিক সূত্র দাবি করেছে, এক দিকে পিসিটি (পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল) অন্য দিকে এনসিটি (নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল), আর এ দু’টির মধ্যে রয়েছে দেশের প্রধান প্রধান তেল স্থাপনা এবং নৌবাহিনীর ঘাঁটি। পিসিটি পতিত আওয়ামী সরকারের আমলে সৌদি অপারেটরের হাতে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অপর দিকে এনসিটি পরিচালনায় বর্তমান সরকারও পতিত সরকারের পথেই হাঁটছে বলে মন্তব্য বন্দর সংশ্লিষ্টদের। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক টার্মিনাল অপারেটরগুলোর শীর্ষপদে আমাদের প্রতিবেশী একটি দেশের কর্মকর্তাদের প্রাধান্য।

তাই এই দুই টার্মিনালের মাধ্যমে প্রকারান্তরে আমাদের কৌশলগত স্থাপনার ওপর প্রতিবেশী দেশটির নজরদারির সুযোগ অবারিত হচ্ছে কি না তা ভেবে দেখার দাবি রাখে। অর্থনেতিক লাভকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় কৌশলগত স্থাপনার নিরাপত্তাকে খাটো করে দেখা হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নও উঠছে। একই সাথে দেশীয় অপারেটর নিয়োগ করার ক্ষেত্রেও একচেটিয়া প্রভাব বন্ধে গুরুত্বারোপ করেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।

বন্দর সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরকার পিপিপির (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ) আওতায় চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) সৌদি আরবভিত্তিক রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনালকে (আরএসজিটিআই) একটি কনসেশন চুক্তির আওতায় পরিচালনার দায়িত্ব দেয়। গত বছরের ৬ ডিসেম্বর ইকুইপ-অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার ভিত্তিতে ২২ বছরের একটি কনসেশন চুক্তির ভিত্তিেিত পিসিটি পরিচালনা করছে আরএসজিটি বাংলাদেশ।

চুক্তির পর চলতি বছরের ১০ জুন টার্মিনালটির অপারেশন কার্যক্রম শুরু করে আরএসজিটি বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠানটি সৌদি আরবভিত্তিক হলেও চট্টগ্রাম বন্দরে এই প্রতিষ্ঠান নিয়োজিত হয় অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে।

দ্য ডেইলি স্টারের প্রধান শিরোনাম ‘Crowd control: Police seek to stop use of lethal weapon’ অর্থাৎ ‘সমাবেশ নিয়ন্ত্রণ: প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধে পুলিশের উদ্যোগ’।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সমাবেশ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রাণঘাতী অস্ত্র এবং ছররা গুলি ব্যবহার বন্ধ করতে পারে পুলিশ। কারণ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় তাদের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে ব্যাপক প্রাণহানী এবং বিশ্বব্যাপী সমালোচনা হয়েছিল।

পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) এনামুল হক সাগর বলেন, ‘আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারে যুগোপযোগী বিধিমালা প্রণয়নের প্রক্রিয়া চলছে।’

বেআইনি সমাবেশ নিয়ন্ত্রণে প্রাণঘাতী নয় এমন পদ্ধতির সুপারিশ করতে এরইমধ্যে একজন ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেলের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছে পুলিশ সদর দফতর।

দৈনিক বণিক বার্তার প্রধান শিরোনাম ‘পুরনো নীতি অনুসরণ করে বন্ডের মাধ্যমে বিদ্যুতের বকেয়া পরিশোধ হচ্ছে’। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দুই বছরে বিদ্যুৎ ও সারে ভর্তুকি বাবদ বিপুল অংকের অর্থ বকেয়া পড়ে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে বকেয়া পরিশোধের উদ্যোগ নেয়া হয়। চলতি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে কয়েক ধাপে বিশেষ বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও সারের ভর্তুকি বাবদ ২৬ হাজার কোটি টাকার বকেয়া পরিশোধ করা হয়েছে। ভর্তুকি বাবদ বকেয়া থেকে যাওয়া বাকি দায় পরিশোধের ভার এখন গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর। পাশাপাশি তৈরি হয়েছে নতুন দায় পরিশোধের চাপও। এ অবস্থায় বিগত সরকারের মতো বকেয়া পরিশোধে বন্ডের দ্বারস্থ হয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে বকেয়া পরিশোধের চাপ আপাতভাবে সামাল দেয়া গেলেও এর মাধ্যমে মূলত বর্তমান দায়কে বিলম্বিত করা হচ্ছে। এতে ভবিষ্যৎ ঋণের বোঝা আরো বড় হচ্ছে। এ অবস্থায় সরকারের উচিত বন্ডের পরিবর্তে রাজস্ব আয় বাড়িয়ে নিজস্ব অর্থে এ দায় পরিশোধ করার মতো টেকসই সমাধানের দিকে নজর দেয়া।

সরকারি দায় পরিশোধে বন্ড ইস্যুর নজির বেশ পুরনো। তবে এর চর্চা অতীতে খুব বেশি দেখা যায়নি। বেশ আগে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) দায় পরিশোধের জন্য বিশেষ বন্ড ইস্যু করেছিল সরকার। বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে বড় অংকের দায় পরিশোধের নজির দেখা যায় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের শেষ দিকে। এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বিদ্যুৎ ও সারে ভর্তুকির দায় পরিশোধে ২৬ হাজার ২০০ কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করে আওয়ামী লীগ সরকার। এর মধ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি বন্ড ইস্যু করা হয়েছে বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকির দায় পরিশোধে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ১২ হাজার কোটি টাকার মতো বিশেষ বন্ড ইস্যু করা হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা বিদ্যুৎ খাতে এবং সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা সারের ভর্তুকি পরিশোধের জন্য ইস্যু করা হয়েছে। তাছাড়া এ সময়ে বিদ্যুতের ভর্তুকি বাবদ বাজেট বরাদ্দ থেকে ৭ হাজার কোটি টাকা নগদ অর্থও পরিশোধ করা হয়েছে।

‘মেট্রোরেল থেকে আমলাদের বিদায়’-এটি দৈনিক আজকের পত্রিকার প্রথম পাতার খবর। প্রতিবেদনে বলা হয়, মেট্রোরেল চালানো কোম্পানি ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগ পদে আর আমলা-নির্ভরতা থাকছে না। গত ৯ অক্টোবর প্রকাশিত নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে এমডি পদের জন্য সিভিল, ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ডিগ্রিধারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ২০১৭ সালে কার্যত স্বেচ্ছাচারীভাবে নিয়ম সংশোধন করে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি সচিব বিশেষ করে সড়ক পরিবহন খাতের অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়ার বিধান করা হয়েছিল। ডিএমটিসিলে এ পর্যন্ত কাজ করা দুই এমডিই আমলা।

ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে কোম্পানির যাত্রা করার সময় কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তির প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখে জাপানি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে বিশেষায়িত অভিজ্ঞতার এমডি নিয়োগের নিয়ম করা হয়েছিল। সেখানে ২০ বছরের অভিজ্ঞতাসহ কারিগরি বিষয়েও অভিজ্ঞতার কথা বলা হয়। কিন্তু ২০১৭ সালে সাবেক এমডি এম এ এন ছিদ্দিক তাঁর নিজের সুবিধার্থে নিয়ম পরিবর্তন করেন, যাতে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি সচিব হিসেবে তিনি এই পদে বহাল থাকতে পারেন। এর পরে আরও ২৭ জন বিভিন্ন পদমর্যাদার সরকারি আমলা কোম্পানিতে নিয়োগ পেয়েছিলেন। এখন অন্তর্বর্তী সরকার নিয়োগের আগের নিয়ম ফিরিয়ে এনে মেট্রোরেলকেন্দ্রিক কারিগরি যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়োগ দেবে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নতুন বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী এমডি পদের জন্য প্রার্থীদের সিভিল, ইলেকট্রিক্যাল বা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি থাকা বাধ্যতামূলক। এর পাশাপাশি প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, ব্যবসা প্রশাসন বা পরিবহন ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকলে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বড় মাপের গণপরিবহন প্রকল্পে অন্তত ২০ বছরের অভিজ্ঞতা (যার মধ্যে তিন বছর শীর্ষ নেতৃত্বে থাকা) এবং আন্তর্জাতিক মানের জটিল প্রকল্প বাস্তবায়নে অভিজ্ঞতা থাকা প্রার্থীদের জন্য আবশ্যিক হবে।

নতুন বিজ্ঞপ্তিতে কারিগরি যোগ্যতার বিষয়টি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হওয়াকে বিশেষজ্ঞরা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ মনে করছেন। কারণ মেট্রোরেল পরিচালনার মতো উচ্চ কারিগরি প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে প্রকৌশল পেশার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা থাকা অত্যন্ত জরুরি। নতুন যোগ্যতায় এমডি নিয়োগ মেট্রোরেলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

বর্তমান এমডি মোহাম্মদ আবদুর রউফ গত ৯ সেপ্টেম্বর ডিএমটিসিএলের এমডি হিসেবে যোগ দেন। এর আগে তিনি লাইন-৫ নর্দান রুটের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) এবং ডিএমটিসিএলের কোম্পানি সচিব (যুগ্ম সচিব) ছিলেন। আবদুর রউফ বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। তিনি পড়াশোনা করেছেন রাজনীতি

বিজ্ঞান বিষয়ে। আগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। ডিএমটিসিএলে দায়িত্ব গ্রহণের আগে তিনি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সালে তিনি ডিএমটিসিএলের এমডি হন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত সেপ্টেম্বর মাসে ওবায়দুল কাদেরের আশীর্বাদপুষ্ট হিসেবে পরিচিত ছিদ্দিকের পুনর্নিয়োগ বাতিল করা হয়। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন মোহাম্মদ আবদুর রউফ।

আপনার মন্তব্য

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.