ইতিহাস প্রতিদিন ডেস্ক: মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের কোনো ভুল যদি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয় তাহলে দলটি জাতির কাছে ক্ষমা চাইবে বলে জানিয়েছেন আমীর ডা. শফিকুর রহমান। একাত্তরের পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেছেন, যারা ভারতে চলে গিয়েছিল তাদের জন্য পরিস্তিতি একরকম ছিল আর যারা দেশে ছিল তাদের জন্য অন্যরকম অবস্থা ছিল। দেশে থাকাদের হয়তো পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হতো না হয় তাদের পক্ষে থাকতে হতো। এমন অবস্থায় যারা সরাসারি যুদ্ধ করেনি তাদের অনেকের অবস্থান পাকিস্তানিদের পক্ষে ছিল। যা আর পরবর্তীতে আলোচনা হয় না। আলোচনা শুধু জামায়াত নিয়ে। মঙ্গলবার লন্ডনে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন জামায়াত আমীর। স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্টে বিভিন্ন বাংলা মিডিয়ার সাংবাদিকরা এতে অংশ নেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের অবস্থানটা কোথায় ছিল, বর্তমান জামায়াতের অবস্থানটা কী?
আনফরচুনেটলি পাকিস্তানিরা আমাদের উপর একটা যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল। এটা বাংলাদেশের জনগণ ইনভাইট করে আনেনি। ভুট্টু সাহেব তার একগুয়েমির কারণে পাকিস্তানকে একটা অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন এবং সেখানে ইয়াহিয়া খান তার কাছে কার্যত অসহায় আত্মসমর্পন করেছেন। বাংলাদেশের জনগণের জন্য এর বাইরে কিছু করার ছিল না, তখন যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়া ছাড়া। হ্যাঁ, যদি সেই সময় জামায়াতের কোনো নেতা কোনো অপরাধ করে থাকেন তার যদি বিচার হয়, আমার কোনো বক্তব্য নাই, তার বিচার হোক এবং সেই বিচারে কোনো শাস্তি হয় তাতেও আমার কোনো বক্তব্য নাই। কিন্তু একজন অপরাধ না করে শুধু রাজনীতির কারণে যদি তিনি ভিক্টিমাইজড হন এটা এর চাইতে বড় অপরাধ এবং আমরা মনে করি সেটিই হয়েছে। এই বিচারের ব্যাপারে অনেকেই আপত্তি তুলেছেন। আমি জাস্ট বৃটেনের কোর্টের একটা বিষয়ে আপনাদের সামনে কোট করবো। ‘চৌধুরী মইনুদ্দিনের বিচারের ব্যাপারে এখানকার জাজরা একটা অবজারবেশন দিয়েছেন। ইটস এ জেনোসাইড অফ জাস্টিস। এই বিচারের মাধ্যমে বিচারকে হত্যা করা হয়েছে। বিচারের গণহত্যায়িত হয়েছে। দিজ ইজ রিয়েলিটি। আমরা এই সমস্ত পেইন নিয়ে আছি। ১৫টা বছর আমাদের অফিসে একদিনও বসতে দেয়নি, কথা বলতে দেয়নি। আমরা এদেশের নাগরিক, একটা বৈধ পার্টি। আমাদের একটা র্যালি অর্গানাইজ করতে দেয়া হয়নি। আমাদের কথা নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে যেতে পারিনি। তাদের মাধ্যমে জাতিকে বলতে পারিনি। সাংবাদিকদের মনের কথাগুলো আমরা শুনতে পারিনাই। তাদের মাধ্যমে জাতির কথা আমাদের কাছে আসবে এটাও পথ বন্ধ ছিল। ফলে আমাদের সকল ইন্টারেকশন বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এই ৫ তারিখের পর থেকে আগস্ট মাসে আমরা একটু সামান্য সুযোগ পেয়েছি। এখন যেমন আমাদের কথা বলতে পারছি। আপনাদের কথাগুলো শুনতে পারছি। এভাবে যখন মিউচুয়াল ইন্টারেকশন আমাদের বেশি বেশি করে হবে তখন আমাদের ব্যাপারে মিস প্রোপাগান্ডা এবং মিথ যেগুলো আছে ইনশাআলাহ দূর হবে। আর আমরা যদি কোনো ভুল করে থাকি সত্যিই যদি, এটা উইদাউট অ্যানি কোশ্চেন, এটা যদি প্রমাণ হয় সন্দেহাতিতভাবে আমি দায়িত্ব নিচ্ছি- আমি ক্ষমা চাইবো জাতির কাছে ইনশাআল্লাহ। এ ব্যাপারে আমার কোনো দূর্বলতা নাই।
বর্তমান সরকারের সময় শুধুমাত্র সংস্কার কাজেই ব্যয় করা হবে? নাকি রাজনৈতিক অনেক রকমের যোগ-বিয়োগ, অনেক রকমের মেরূকরণ হতে পারে বলে মনে করেন?
এটি বর্তমান সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। চার বছরের মতো একটি সময় উনারা প্রয়োজনে থাকতে পারেন বলে প্রধান উপদেষ্টা একটি ইঙ্গিত দিয়েছেন। এখন এটা কি শুধু সংস্কারের জন্যেই প্রয়োজন, না-কি আরো কিছু কাজ এখানে হবে। রাজনৈতিক কোনো যোগ-বিয়োগ বা রসায়ন এখানে আছে কি-না। এর উত্তর উনার কাছে সবচেয়ে ভালো আছে। আমি আপনার মতোই পড়েছি। আমি যেটা বলবো, আমরা আসলে সময়টাকে বেশি মনে করছি। এর বেশি আমি বলতে চাই না।
বিএনপির অ্যাক্টিং চেয়ারম্যান এখানে (লন্ডনে) আছেন, আপনি একটি বৃহত্তর দলের আমির। দেশ গড়ার স্বার্থে দুই নেতার বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি-না অথবা আপনাদের মধ্যে কোনো আলাপ হয়েছে কি-না?
আলহামদুলিল্লাহ, কথাবার্তা আশা করি হবে। বৈঠকের সুযোগটা এবার হয়নি। সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য এসেছি। আগামী জানুয়ারিতে আসার (লন্ডনে) একটি সম্ভাবনা আছে। ইনশাল্লাহ আমরা বসবো, পরস্পরকে জানব।
বিএনপির সঙ্গে জোট করে নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা আছে কি-না?
নির্বাচন কমিশনটা আগে গঠন হয়ে যাক। যারা নির্বাচনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেনি তারা আগে হোক। যারা ভুলভাবে একাধিকবার ভোটার হয়েছেন তাদের ছাঁটাই ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হোক। গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হলো-একটি ক্ষমতাসীন দল থাকবে, তার পাশাপাশি একটি শক্তিশালী বিরোধীদল থাকবে। গণতন্ত্রের দুইটি পাঠ। সামনের একটি টায়ার ও পিছনের একটি টায়ার। যেকোনো যন্ত্র-যান চলতে গেলে মিনিমাম দুটি টায়ার লাগবে। আমরা হয়তবা একসাথেও করতে পারি। আবার আলাদাও করতে পারি। উনারা পাওয়ারে গেল আমরা বিরোধী দলে থাকলাম, কিংবা মানুষ আমাদেরকে পছন্দ করলে ক্ষমতায় আমরা গেলাম। উনারা বিরোধী দলে থাকলো। আমরা একে অন্যের সহায়তা করবো। বিউটি অব ডেমোক্রেসিকে আমরা এভাবে ফুটিয়ে তুলতে চাই।
জামায়াত কি শক্তিশালী বিরোধী দলের ভূমিকার রাখতে পারবে? অথবা ক্ষমতায় যাওয়ার মতো অবস্থানে আপনারা গেছেন কি-না?
অবশ্যই শক্তিশালী বিরোধী দল হওয়া উচিত। বিরোধী দল দুর্বল হলে দেশও দুর্বল হয়ে যায়। বিরোধী দল শক্তিশালী মানে একটি নেশন শক্তিশালী। সুতরাং আমাদের একটি শক্তিশালী বিরোধী দল দরকার। দুই নাম্বার হলো-মাইনাস ওয়ানের কোনো আভাস আমরা পাচ্ছি কি-না, আমার কাছে এরকম কিছু নাই। আমরা যেমন নির্যাতিত মজলুম, তিনিও তেমন নির্যাতিত মজলুম। আমরা চাই সকল মজলুমের সঠিক মূল্যায়ন হোক। তিনি দেশে ফিরে যাবেন, সম্মানের সাথে রাজনীতি করবেন। দেশকে নেতৃত্ব দিবেন। আমরা স্বাগত জানাব।
গত ১৫ বছরে বিচারিকভাবে আপনারা ভিকটিমাইজড হয়েছেন, আপনারা কি এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন?
ইনশাআল্লাহ। খুব শীঘ্রই নেয়া হবে।
বিএনপি-জামায়াতের আমলে বাংলা ভাইসহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা বেশি ছিল, বিএনপি-জামায়াত জঙ্গি দমনে ব্যর্থ ছিল কি-না?
জঙ্গিদের নিজস্ব একটি গ্রামার আছে। তারা ওই দেশের বিদ্যমান গ্রামার, সংবিধান কিছুই মানে না। তাদের নিজস্ব গ্রামার নিয়েই তারা কাজ করে। এটা শুধু বাংলাদেশ না, সারাবিশ্বের জন্য উদ্বেগের বিষয়। সারাবিশ্বের ইক্যুয়ালি এটাকে অ্যাড্রেস করার বিষয়। এককভাবে কোনো দেশ এটা করতে পারবে না। এখানে দুটি কাজ করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, একটা হলো অ্যাঙ্গেজমেন্ট অব দ্য ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটিজ, আরেকটা হলো অ্যাঙ্গেজমেন্ট অব দ্য ডোমেস্টিক কমিউনিটিজ। শুধু বাইরের লোকরা এসে এটা ঠিক করে দিতে পারবে না। আমাদের ভিতরের লোকদেরও এটার বিষয়ে মজবুত অবস্থান লাগবে। আমরা এই দুটিতে বিশ্বাসী। অনেকে ধারণা করে থাকেন, চার দলীয় সরকারের সময় এটার উত্থান ঘটেছে। হ্যাঁ, ওই সময় বড় মাত্রায় ধরা পড়েছে। আবার ওদেরকে কাবুও করা হয়েছে। তাদের সবাইকে কিন্তু আইনের আওতায় আনা হয়েছে এবং ওই সময় কারও কারও বিচারও হয়েছে। সুতরাং সরকারের এখনো কোনো দুর্বলতা ছিল না।
জামায়াত ইসলামী সম্প্রতি হিন্দু শাখা করেছে, এটা দ্বারা হিন্দুস্তানকে প্রোমোট করা হচ্ছে কি-না?
আমরা সবাই বলি হিন্দু, মুসলমান, বৈদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাই আমরা সমান। তাহলে কী আমরা সবাই প্রোমোট করছি? না, আমরা করছি না। তিনি বলেন, আমাদের ওইরকম আলাদা কোনো শাখা নাই। এটা রংপুরের পীরগাছার একটি ঘটনা। হ্যাঁ, তাদের অনেকেই আমাদের সহযোগী সদস্য আছেন।