নিজস্ব প্রতিবেদক: সংঘাত নয়, শান্তিতে বিশ্বাস করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোথাও সংঘাত হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নারী ও শিশুরা।
বাংলাদেশেও তাই। ফলে তিনি সব জায়গায় শান্তি চান। এর জন্য যা যা করার দরকার বাংলাদেশ তাই করবে বলে অভিমত দিয়েছেন তিনি।
সোমবার (২৯ মে) আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত অবস্থায় শাহাদাতবরণকারী অফিসার, সৈনিক পরিবারের সদস্য ও আহতদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানেই তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রযুক্তির প্রসারের সাথে সাথে অপশক্তির নতুন নতুন হুমকির কারণে বিশ্বে শান্তি নিশ্চিত করা এখন অনেক বেশি কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে শান্তির জন্য যা যা করার দরকার, বাংলাদেশ তাই করবে।
বিশ্বে শান্তি নিশ্চিত করা এখন অতীতের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন। প্রযুক্তির সাম্প্রতিক প্রসার ও অগ্রযাত্রার সাথে সাথে বাড়ছে অপশক্তিসমূহের নতুন নতুন হুমকি। ফলে, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনগুলোয় শান্তিরক্ষীদের বহুমাত্রিক জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। শান্তিরক্ষা মিশনসমূহ উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে সমৃদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা এখন বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা যাতে বিশ্বের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং এবং বিপদজনক অঞ্চলসমূহে সৃষ্ট জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে সেজন্য আমরা তাদের সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ দিয়ে সর্বদা প্রস্তুত রেখেছি।
মিশন এলাকার পরিবেশ, আবহাওয়া ও ভূমির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নত প্রযুক্তির সামরিক সরঞ্জামাদিসহ পোশাক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর সরবরাহ নিশ্চিত করা হচ্ছে। আমরা বাংলাদেশ কন্টিনজেন্টসমূহে অত্যাধুনিক মাইন-রেজিস্ট্যান্ট অ্যামবুশ প্রটেক্টেড যানবাহন এবং শান্তিরক্ষীদের যোগাযোগের জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন করেছি। আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন ও প্রশিক্ষণ একটি চলমান প্রক্রিয়া যা আমরা ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সব সময় শান্তিতে বিশ্বাস করে, শান্তির জন্য যা যা করার দরকার, বাংলাদেশ তাই করবে। সংঘাত নয় শান্তি চাই। যেকোনো সংঘাত আলোচনায় সমাধান চাই। অস্ত্র প্রতিযোগিতা আমরা চাই না। সংঘাতের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নারী ও শিশু।
বিশ্ব শান্তি রক্ষা-ই শুধু নয়, নিজের দেশেও শান্তি শৃঙ্খলা নিশ্চিত করছি আমরা। ২০০৮ সালের পর থেকে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে এবং স্থিতিশীল শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আছে বলেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ-ই পারে একটি দেশকে উন্নয়নশীল করতে। আমরা চাই, ২০৪১ সালের মধ্যে এই বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। সেজন্য এই স্থিতিশীল শান্তিপূর্ণ পরিবেশ প্রয়োজন। আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি। আমরা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে চলবো। ফলে আর্থসামাজিক উন্নয়নের সাথে সাথে প্রতিটি বাহিনী ও মানুষের জীবনমান উন্নত করার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ এগিয়েছে। উন্নয়নশীলের মর্যাদা পেয়েছে। আজকের বাংলাদেশে হতদরিদ্র মাত্র ৫ দশমিক ০৭ ভাগ। আমাদের লক্ষ্য- দেশে আর কোনো অতি দারিদ্র্য থাকবে না। এটা আমরা দূর করবো। দেশে একটি মানুষও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না।
শান্তিরক্ষীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা সংঘাত প্রতিরোধ, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা, মানবাধিকার নিশ্চিত ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আন্তরিকতাপূর্ণ কাজের কারণে ওই সকল দেশের জনগণ আপনাদেরকে অকুণ্ঠ ভালোবাসা উপহার দিয়েছে। অনেক দেশ আপনাদের কাছ থেকে বাংলা সংস্কৃতি ও ভাষা রপ্ত করেছে। আপনারা অন্যান্য দেশের সহযোগী শান্তিরক্ষীদেরও শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অর্জন করছেন। করোনা মহামারির মধ্যেও শান্তি স্থাপনে আপনাদের পেশাদারিত্ব, দক্ষতা ও নিষ্ঠা প্রশংসিত হয়েছে। সর্বোপরি, আপনারা বিশ্ব শান্তিরক্ষায় অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন। এজন্য আমি আপনাদেরকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাই।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, তিন বাহিনীর প্রধানসহ সশস্ত্রবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।