ওসমান, প্রতিনিধি জাবি: বনভূমি উজাড় করে যত্রতত্র ভবন নির্মাণ না করে অংশীজনের মতামত নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করার দাবিতে সংহতি সমাবেশ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আজ শনিবার বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে ‘জাহাঙ্গীরনগর বাঁচাও আন্দোলন ‘ এর ব্যানারে আয়োজিত সংহতি সমাবেশে বক্তারা মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের দাবি জানান। বর্তমানে চলমান ‘অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের’ অধীনে ১৪৪৫ কোটি টাকার কাজ, নিজস্ব অর্থায়নে আইবিএ, আইআইটি ও চারুকলা বিভাগ প্রকল্পের কাজ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে করার দাবি জানান। মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া উন্নয়ন অংশীজনের বিরুদ্ধ বলেও মন্তব্য করেন তারা।
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের(বাপা) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, ‘আমি নিজেও একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। ঢাকা থেকে জাহাঙ্গীরনগরে যখন ঘুরতে আসতাম তখন এই প্রকৃতি, সবুজ বন আমার মন ছেয়ে যেত। কিন্তু বর্তমানে সেই প্রাকৃতিক পরিবেশ নেই। পুঁজিপতি গোষ্ঠীরা স্বার্থের জন্য এ পরিবেশ ও বন ধ্বংস করছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষকদেরও একটা মতামত আছে, তারা কি চায় তাদের মতামতেরও গুরুত্ব দিতে হবে। নিজেদের খেয়ালমতো উন্নয়ন করলে চলবে না। তাই আমরা ‘জাহাঙ্গীরনগর বাঁচাও আন্দোলন’ সাথে সংহতি জানিয়ে মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের দাবি জানাচ্ছি ‘
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘ আমরা দেখেছি পূর্বের প্রশাসনের গাফলতির কারণে যত্রতত্র অপরিকল্পিত ভবন গড়ে উঠছে। তবে পূর্বের উপাচার্য মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে একমত পোষণ করেছিলেন। কিন্তু বর্তমান উপাচার্য বলেন এসব পরিকল্পনা পূর্বের প্রশাসন থেকে হয়ে আসছে, আমার করার কিছুই নেই। এটা বলে তিনি দায় এড়িয়ে যান । বর্তমান উপাচার্য অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের পুনর্বিন্যাস করে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করতে পারতেন, যা সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি। সকল সংকট দূর করাই হলো মাস্টার প্ল্যান। তাই এই আন্দোলন আইবিএ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে নয়। তাদেরকেও একসাথে হয়ে, যৌথভাবে এই আন্দোলনে যোগ দান করার আহবান জানাই। যদি মাস্টারপ্ল্যান করা হতো তাহলে চোরের মতো গাছ কাটার প্রয়োজন ছিল না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে এই দায়িত্ব নিতে হবে। একজন শিক্ষার্থীও যদি এই দাবি জানান তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে তার গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সকল কাজ বন্ধ থাকুক। এই আন্দোলনের সাথে সবাই একমত পোষণ করুক সেই দাবি জানাচ্ছি।
সমাবেশে অন্যান্য বক্তারা আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীজন ও বিশেষজ্ঞদের মতামত না নিয়ে এবং সমন্বয়হীনভাবে যত্রতত্র বিভিন্নরকমের স্থাপনা নির্মাণের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে জাহাঙ্গীরনগরের প্রাণ-প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য। একই সাথে শিক্ষার পরিবেশেও দেখা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক চর্চা বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা। সঠিক পরিকল্পনার অভাবে, একই ভবনের জন্য একাধিক জায়গায় গাছ কাটা, হল ও খেলার মাঠ নির্মাণের নামে গাছ কেটে পরবর্তীতে জায়গা পরিবর্তনের মত প্রহসনের ঘটনা ঘটছে একের পর এক। এছাড়াও যেখানে ৪০ কোটি টাকা খরচ বর্তমান(নতুন) প্রশাসনিক ভবনটি পূর্ণাঙ্গ করা সম্ভব, সেখানে জনগণের ট্যাক্সের টাকার শ্রাদ্ধ করে, ১৫২ কোটি খরচ করে অপ্রয়োজনীয় ৩য় প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের পায়তারা নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলে তারা জানান।