নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর জনগণের ভোটের অধিকার ক্যান্টনমেন্ট থেকে জনগণকে ফিরিয়ে দেওয়া, সেটা তো আওয়ামী লীগই করেছে। তার জন্য আমাদের বহু মানুষকে রক্ত দিতে হয়েছে। আমাকে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন শেখাতে হবে না। কারণ বাংলাদেশের জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রাম, এটা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই আমরা করেছি এবং সেটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (৬ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলন তিনি এসব কথা বলেন। সম্প্রতি নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের নানান দিক তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি হলো সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। তো আমরা সেটাই মেনে চলি। আর নির্বাচনের ব্যাপারে আসলে আমাদের নিজেদেরও একটা দোষ আছে। যে আমরা নির্বাচন নিয়ে খুব বেশি কথা বলি, আমাদের দেশের কিছু লোক..। এখন যারা নির্বাচন বয়কট করেছে অথবা নির্বাচনকে সবসময় কলুষিত করেছে বা ভোট চুরি-ডাকাতি করেছে। এখন তাদের কাছ থেকেই শুনতে হয় অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য হলো সেটাই।
তিনি বলেন, যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে, জনগণের ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থেকে দেশ পরিচালনা করেছে। সেইসময় নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে যাদের এতো উদ্বেগ দেখিনি। অথচ সেই ২০০৮ সালের নির্বাচনে যখন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলো। সেই নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত ২০ দলীয় ঐক্যজোট মিলে পেয়েছিল মাত্র ২৯ টা সিট। পরে আবার একটা সিট পেয়েছে, সবমিলিয়ে মোট ৩০টা সিট। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচন ঠেকাতে তারা অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ হত্যা, এমন কোনো অপকর্ম নেই তারা করেনি। এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে যোগদান করে ৩০০ আসনে ৭০০ জনের উপরে লোককে নমিনেশন দিয়ে নিজেরাই মারামারি করে নির্বাচন থেকে সরে গেল। এর মাধ্যমে তারা নির্বাচনটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করলো। এখন তাদের মুখে আবার অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা শুনি, সব জায়গায় তারা প্রচার করে বেড়াচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ যখন আমাদের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তখন আমার প্রশ্ন হলো, যখন মিলিটারি ডিক্টেটর ছিল, যখন আমরা সংগ্রাম করেছি। জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য। আমারা স্লোগান দিয়েছি, আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব।
এর আগে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে পৌঁছান শেখ হাসিনা। অধিবেশনে অংশ নেওয়ার ফাঁকে অন্যান্য উচ্চপর্যায়ের ও দ্বিপাক্ষিক বৈঠকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। এ ছাড়া ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থানের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠান এবং বাংলাদেশ দূতাবাস পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর প্রধানমন্ত্রী ৩০ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন থেকে লন্ডনে যান। সেখান থেকে দেশে ফেরার আগে শেখ হাসিনা বাংলাদেশিদের পক্ষ থেকে দেওয়া এক সংবর্ধনায় যোগ দেন। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ১৬ দিনের সরকারি সফর শেষ করে বুধবার (৪ অক্টোবর) দেশে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।