ওসমান সরদার, জাবি প্রতিনিধি: বিএনপির ডাকা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির অংশ হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রধান ফটকসহ ছয়টি ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। বুধবার (০১ নভেম্বর) সকাল সাড়ে সাতটায় ওই প্রবেশ পথগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।
এসময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক (ডেইরি গেইট), জয় বাংলা গেইট (প্রান্তিক গেইট), মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন গেইট, বিশমাইল গেইট, ইসলামনগর গেইট ও আমবাগানের প্রবেশ পথে তালা ঝুলিয়ে দেন। তবে প্রায় আধা ঘন্টা পর সকাল ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টরের নির্দেশে তালা খুলে দেন নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত প্রহরীরা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও দায়িত্বরত গার্ডদের সূত্রে জানা যায়, সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ছাত্রদলের ৫—৭ জন নেতাকর্মী এসে ওই ফটকগুলোতে তালা লাগিয়ে দেন। এ সময় তালার সঙ্গে ‘সবার্ত্মক অবরোধ’ লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ডও ঝুলিয়ে দেন তারা। তালা লাগানোর সময় উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের মীর মশাররফ হোসেন হলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইকবাল হোসেন, জোবায়ের আল মাহমুদ, নাইমুল হাসান কৌশিক, রেজাউল আমিন, সাহানুর রহমান, এম আর মুরাদ, রাজন মিয়া, নিশাত আব্দুল্লাহ, মুত্তাশিন ফুয়াদ, রাজু, আলামিন প্রমুখ।
দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রবেশপথে তালা দেয়া হয়েছে বলে জানান ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। বিষয়টি জানতে পেরে প্রধান ফটকে উপস্থিত হন সহকারী প্রক্টর মওদুদ আহমেদ। তিনি এসময় নিরাপত্তা প্রহরীদের তালা ভেঙে ফেলতে বলেন। সকাল ৮টার দিকে তালা খুলে দিলে আবার যানবাহন চলাচল ও স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়। এছাড়া আধাঘন্টা পর প্রান্তিক গেইট ও মীর মশাররফ হোসেন হল ও আমবাগান গেইটের তালাও একই সময় ভেঙে ফেলা হয় বলে জানান দায়িত্বরত নিরাপত্তা প্রহরীরা।
প্রধান ফটকে দায়িত্বরত আনসার সদস্য সাইফুল ইসলাম ও নিরাপত্তা প্রহরী শাহ আলম জানান, ‘সকাল সাড়ে সাতটা দিকে দুইজন এসে হঠাৎ করে গেইট বন্ধ করে তালা লাগিয়ে দেয়। আমরা কিছু বুঝে উঠার আগেই তালা লাগিয়ে দিয়ে চলে যায় তারা। পরে কন্ট্রোল রুমে জানালে তালা ভেঙে ফেলতে বলে। আধাঘন্টার মধ্যেই আমরা তালা খুলে দেই।’
কেন্দ্র ঘোষিত তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ক্যাম্পাসের ফটকগুলোতে তালা লাগানো হয়েছে জানিয়ে ছাত্রদল নেতা নাইমুল হাসান কৌশিক বলেন, ‘সরকার যতো বেশি বাধা দিবে, হামলা মামলা করবে— সরকারের পতন তত ভয়ংকর হবে। পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা এই স্বৈরাচার সরকারকে রাজপথেই মোকাবেলা করবো। আজকের এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে হুঁশিয়ার করে বলতে চাই— ক্যাম্পাসে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা বন্ধ করে শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখুন। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে বিগত দিনের অন্যায়ের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে দেশের মানুষের এই আন্দোলনে পাশে থেকে কৃতকর্মের কিছুটা প্রায়শ্চিত্ত করবে। অন্যথায় তাদের রাজপথে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।’
ছাত্রদল নেতা জোবায়ের আল মাহমুদ বলেন, ‘কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল এ কর্মসূচি পালন করেছে। একই সাথে ছাত্রলীগকে এই বার্তা দিচ্ছে যে অবিলম্বে তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ না করলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে জাবি ছাত্রদল দূবার্র আন্দোলন গড়ে তুলবে। ছাত্রলীগের প্রশাসনের মদদপুষ্ট হয়ে ছাত্রলীগের সকল সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে প্রতিহত করে স্বৈরাচার পতন আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করবে।’
এ ব্যাপারে সহকারী প্রক্টর মওদুদ আহমেদ বলেন, ‘আমি সকালে মীর মশাররফ হোসেন হলের গেইট দিয়ে বের হওয়ার সময় দেখি তালাবদ্ধ। পরে ডেইরি গেইটে এসে দেখি সেখানেও তালা মারা ও ছাত্রদলের ব্যানার ঝুলছে। তবে কারা তালা লাগিয়েছে আমাদের চোখে পড়েনি। আমি দ্রুত তালা ভেঙে ফেলতে বলেছি। কারণ এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলো প্রবেশ করবে, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম স্বাভাবিক করার জন্যই নিরাপত্তা অফিসকে দ্রুত সবগুলো তালা ভেঙে ফেলতে বলেছি।’