জাবির ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিবন্ধীদের সহযোগিতা
জাবির ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পাশে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পিডিএফ
ওসমান সরদার, জাবি প্রতিনিধি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষ ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (পিডিএফ)। পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের এ মহতী উদ্যোগের কারণে ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শতাধিক শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সম্পন্ন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পেরেছেন।
চলতি বছরের ভর্তিযুদ্ধে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় তথ্য সহয়তা কেন্দ্র, পরিবহণ সেবা, আবাসন সুবিধাসহ বেশকিছু কার্যক্রম পরিচালনা করছে সংগঠনটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ সংলগ্ন প্রাঙ্গনে তাদের ভর্তি সহায়তা ও তথ্য কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়াও বিগত দুই দিনের পরীক্ষায় প্রায় দুই শতাধিক প্রতিবন্ধি শিক্ষার্থীদেরকে হলে থাকার ব্যবস্থা,পরীক্ষার কেন্দ্রের তথ্য ও কেন্দ্রে পৌঁছাতে যথাযথ সহায়তা করেছে সংগঠনটির কর্মীরা।
এ বিষয়ে ভর্তিচ্ছু প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী সজিব ইসলাম বলেন, ক্যাম্পাস থেকে পরীক্ষার কেন্দ্রগুলো দূরে হওয়ায় শারীরিক প্রতিবন্ধকতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে বেশ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। পিডিএফ সংগঠন থেকে পরীক্ষার কেন্দ্র, সিটপ্ল্যান খুঁজতে এবং কেন্দ্রে পৌঁছাতে সহায়তা করেছে।
সংগঠনটির প্রতিষ্ঠালগ্নকালে প্রতিবন্ধী কোটায় মাত্র ৩ জন প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রী ভর্তি হতে পারলেও এখন প্রতিবছর ১৫’র অধিক প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রী ভর্তি হতে পারেন। যাতে পিডিএফ অগ্রনী ভূমিকা পালন করে।
সংগঠনটির সভাপতি আনিকা তাবাসসুম বলেন, ‘প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করে দেশ ও সমাজের উন্নয়ন সম্ভব নয় বরং তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের প্রতি সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব লক্ষণীয় এবং সেজন্য প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের লক্ষ্যে পিডিএফ কাজ করে যাচ্ছে।’
ভর্তি পরীক্ষায় তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, চলতি বছরের ভর্তি পরীক্ষায় আগত প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের তথ্য সরবরাহ করে সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি শ্রুতিলেখক প্রদান করা, শ্রুতিলেখকের অনুমতি নিতে সহায়তা করা, হলে থাকার ব্যবস্থা করা, অনুষদগুলোর ডীন স্যারদের সাথে কথা বলে হুইলচেয়ার ব্যবহার করা শিক্ষার্থীদের নিচতলায় পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করাসহ সহায়তা কেন্দ্রে স্যালাইন ও গ্লুকোজের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
নিয়মিত কার্যক্রমের বাহিরে প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতা বিষয়ক সভা-সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে পিডিএফ। সংগঠনের উদ্যোগে জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস, আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিন, সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী দিবস উদযাপন করা হয়। এছাড়াও তাদের সেবামূলক কার্যক্রমের মধ্যে আরও আছে শারীরিক প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের উপবৃত্তির ব্যবস্থা এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাকরণ।
এ প্রসঙ্গে সংগঠনটির প্রধান উপদেষ্টা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. এ টি এম আতিকুর রহমান বলেন, পিডিএফ একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তাদের উদ্যোগের মাধ্যমে যেমন প্রতিবন্ধি শিক্ষার্থীরা উপকৃত হয় তেমনি সমাজেও সচেতনতা সৃষ্টি হয়। প্রতিবন্ধিদের দেখার যে মানসিকতা সেটার মধ্যে যদি পরিবর্তন আসে তাহলে তারা আমাদের সম্পদে পরিণত হবে। সংগঠনটির একযুগেরও অধিক সময় ধরে পথচলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক – শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সার্বিক সহযোগিতা পেয়েছি।
প্রতিবন্ধিদের বিষয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে তিনি বলেন, নানা অসংগতি আছে এই সমাজের মধ্যে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এ লড়াইটা সামাজিক লড়াই। সামাজিক প্রতিবন্ধিতাও এই লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে দূর হবে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তনের মাধ্যমে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষাপটে প্রশাসন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী প্রত্যেকের মাঝে আমরা এই মানসিকতার ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পেরেছি। সামনে প্রতিবন্ধিদের জন্য সুযোগ সুবিধা আরো বেড়ে যাবে এবং তারা আরো দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত হবে।
উল্লেখ্য, ‘আমরা করবো জয়’ এই স্লোগান ধারণ করে ২০০৮ সালের ৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ে “পিডিএফ” নামক সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সমন্ধে সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি, তাদের উচ্চশিক্ষার্থে স্কলারশিপ প্রোগ্রাম, সমাজের বিভিন্ন কার্যক্রমে অধিকতর সম্পৃক্ত করা সহ বেশকিছু সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করে সংগঠনটি। সমাজের প্রতিবন্ধীদের সমঅধিকার নিশ্চিত করা, তাদেরকে দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা এবং তরুণ সমাজকে সাংগঠনিক দক্ষতা তৈরির মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটানো পিডিএফের অন্যতম লক্ষ্য।