ওসমান সরদার, জাবি প্রতিনিধি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের (৫২ ব্যাচ) নবীন শিক্ষার্থীরা স্বশরীরে ক্লাস শুরু সহ তিন দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে।
আজ সোমবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুর পৌনে ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন রেজিস্টার ভবনে অবস্থান নিয়ে ৩দফা দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান নেয় তারা।
দাবিগুলো হলো, ‘২০ তারিখের মধ্যে হল অ্যালটমেন্ট দিতে হবে, জানুয়ারির শেষ সপ্তাহের মধ্যে স্বশরীরে ক্লাস শুরু করতে হবে, অফলাইনে ক্লাস শুরুর ৩০ কর্ম দিবসের মধ্যে কোন প্রকার পরীক্ষা নেয়া যাবে না এবং এ সংক্রান্ত অফিসিয়াল নোটিশ দিতে হবে।’
এসময় তাদের হাতে “৫২ ব্যাচকে ক্যাম্পাসে না এনে অনলাইনে ক্লাস নামক প্রহসন বন্ধ করুন”, ২০ জানুয়ারির ভেতর হল এলোটমেন্ট নিশ্চিত করুন”, দীর্ঘ সাত মাস পরেও ক্যাম্পাসে কেন মোদের ঠাঁই নেই”, “৫২ ব্যাচকে ক্যাম্পাসে না এনে ৫৩ ব্যাচের পরীক্ষা কেন” ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
অবস্থানকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান তাদের সাথে কথা বলে প্রাথমিকভাবে আশ্বস্ত করে যে, তাদেরকে যেন গণরুমে থাকতে না হয় এজন্য হল চালু না করে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে না। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তাদেরকে হলে আসন বরাদ্দ দেয়া হবে। কিন্তু এতে আশ্বস্ত না হওয়ায় তাদেরকে রেজিস্ট্রারের সাথে সাক্ষাতের কথা বলেন তিনি।
পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হাসান এর সাথে সাক্ষাৎ করে। এসময় তারা তাদের দাবিগুলো তুলে ধরলে রেজিস্ট্রার তাদেরকে আশ্বস্ত করে বলেন, ১৭ তারিখ আউটসোর্সিং এত ৬৪ জন লোক দিবে। এর ফলে, ২০ তারিখের মধ্যে ক্লাস শুরুর প্ল্যান ছিল। কিন্তু কোন হলের আবাসন ব্যাবস্থা না থাকায়, আমরা সিট দিতে পারছি না।
তিনি হলে আসন বরাদ্দের বিষয়ে বলেন, এই মাসের মধ্যে আমরা তোমাদের হলে উঠাতে পারবো বলে আশা করছি। তা না হলে সর্বোচ্চ ফেব্রুয়ারীর ১ম সপ্তাহে যাবে। উপাচার্য বলেছিলেন যে, গণরুম থাকবে না। সেই লক্ষ্যেই আমরা এগোচ্ছি। এবং আশা করছি, তোমাদের গণরুমে উঠতে হবে।
রেজিস্ট্রার আবু হাসানের সাথে কথা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৫২ ব্যাচের শিক্ষার্থী ফারাবী বলেন, আমরা প্রশাসন থেকে আশ্বাস চেয়েছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করে বলেছেন এই মাসের মধ্যেই আমাদের হল এলোটমেন্ট দিয়ে দিবেন। সর্বোচ্চ ফেব্রুয়ারির ১ম সপ্তাহে যেতে পারে। আমরা দূর দুরান্ত থেকে এসে আজকে এখানে অবস্থান নিয়েছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন না দিয়েই পরবর্তী ব্যাচের ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন শুরু হয়ে গেছে। আশা করছি, তাদের পরীক্ষার আগেই আমাদের হলে আবাসন ব্যাবস্থা নিশ্চিত হবে।
ফার্মেসী বিভাগের (৫২ ব্যাচ) শিক্ষার্থী মিনার বলেন, আমরা প্রশাসনের কাছে একটি নির্দিষ্ট তারিখ চেয়েছি যেদিন থেকে আমাদের জন্য আবাসন ব্যাবস্থা করা হবে। আমরা এখন কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছি। আমাদের এখানে অনেকে ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ থেকে আজকে এখানে অবস্থান নিয়েছি।
এছাড়া সারা বাংলাদেশে আমাদের শিক্ষার্থীরা রয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী গ্রামে অবস্থান করছে, সেখানে ইন্টারনেট সংযোগ ভালো না থাকায় তারা ক্লাসে এটেন্ড করতে পারছে না। আমাদের এই মাসের মধ্যে আবাসন নিশ্চিত করতে পারলেই আমরা খুশি।
প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক নিগার সুলতানা বলেন, হল এলোটমেন্ট দেয়ার বিষয় ওয়ার্ক ওর্ডার হয়ে গেছে। এই মাসের শেষেই আমরা নবীন শিক্ষার্থীদের হল এলোটমেন্ট দিয়ে দিব।
নবীন শিক্ষার্থীদের নতুন হলে এলোটমেন্ট দেয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বর্তমানে যারা গণরুমে আছেন, তাদেরকে আগে এলোটমেন্ট দেয়ার ব্যাবস্থা করেছি, নবীনদের মধ্যে অল্পসংখ্যক পাবে।
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২ ব্যাচ এর ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হয় গত বছরের ১৮ জুন থেকে ২২ জুন পর্যন্ত ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলে ৩০ নভেম্বর থেকে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।