স্পোর্টস ডেস্ক: টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর বিপক্ষে তিন ফরম্যাটের কোনো না কোনো একটিতে সিরিজ জয়ের কীর্তি রয়েছে বাংলাদেশের। কিন্তু একমাত্র ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই এখন পর্যন্ত সেই অর্জন ধরা দেয়নি। সুযোগ এসেছিল ২০১৬-তে ওয়ানডে সিরিজ জিতে নেয়ার, তবে তা হয়নি। সেবার ঘরের মাঠে ২-১ এর ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ হারে টাইগাররা। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বাংলাদেশ সফরে ইংলিশরা টানা দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ নিশ্চিত করে। তবে শেষ ম্যাচটি জিতে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা থেকে রক্ষা পায় লাল-সবুজের দল। এবার সুযোগ ইতিহাস বদলানোর। মিরপুর শেরেবাংলা মাঠে আজ দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মাঠে নামবে দু’দল।
আজ জিতলে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ক্রিকেটের কোনো ফরম্যাটে সিরিজ নিশ্চিত করবে বাংলাদেশ। এর আগে চট্টগ্রামের সাগরিকা স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে দাপুটে জয় পায় টাইগাররা । ইংল্যান্ডের ছুড়ে দেয়া ১৫৭ রানের টার্গেটে ৬ উইকেটের জয় তুলে নেয় সাকিব আল হাসানের দল। চট্টগ্রাম থেকে ফিরে এক দিন বিশ্রামের পর গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা মাঠে অনুশীলনে ফেরেন সাকিবরা। এই মাঠেই অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারিয়েছে বাংলাদেশ। এবার ইংল্যান্ডকে হারিয়ে নয়া ইতিহাস গড়ার পালা। প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসান- দু’জনই সিরিজ জিততে আত্মবিশ্বাসী। আর বর্তমান টি-টোয়েন্টি চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে জয়ের পর টাইগাররাও দারুণ ফুরফুরে।
মিরপুরের একাডেমি মাঠে পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী অনুশীলন সেশন করে বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ড। সাদা বলের দুই সংস্করণের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা শক্তি-সামর্থ্যে এগিয়ে থাকলেও ঘরের মাঠে এবারের ওয়ানডে সিরিজে ফেভারিটের তকমাটা ছিল বাংলাদেশের। সেটির যৌক্তিকতাও আছে। ঘরের মাঠে একদিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশ প্রায় অর্ধযুগ অপরাজিত থেকে সিরিজ খেলতে নামে। ঘরের মাঠে সদ্য সমাপ্ত ওয়ানডে সিরিজের আগে আর কোন সিরিজ হারেনি বাংলাদেশ। দুটি হারেই প্রতিপক্ষ এই ইংল্যান্ড।
অন্যদিকে কন্ডিশন বিবেচনায় মিরপুরে বাংলাদেশ বরাবরই শক্তিশালী। তবে টি-টোয়েন্টির গল্পটা ভিন্ন। একই বছর ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে আতিথ্য দেয় বাংলাদেশ। ঘরের মাঠের সুবিধা নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ৪-১ ও নিউজিল্যান্ডকে ৩-২ ব্যবধানে হারায় মাহমুদুল্লাহর দল। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম তিন ম্যাচেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। আর কিউইদের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয় চতুর্থ ম্যাচ পর্যন্ত। এরপর মিরপুরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুই ম্যাচের পরীক্ষা দেয় টাইগাররা। এই সিরিজে প্রথম ম্যাচে পাওয়া জয়কে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৬১ রানে জেতার পর দ্বিতীয় ম্যাচে হেরে যায় ৮ উইকেটে। অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপের আগে আরব-আমিরাতের সঙ্গে দুই ম্যাচের সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। আইসিসির সহযোগী এ দেশটিকে ২-০ ব্যবধানে হারাতে বেশি বেগ পেতে হয়নি বাংলাদেশকে। সব মিলিয়ে এই ১০টি সিরিজের মধ্যে বাংলাদেশ জয় পেয়েছে ৫টিতে। হেরেছে ১টি। বাকি ৪ সিরিজের ফলাফল ড্র।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের জয় দারুণ চমক ছিল। সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে নিশ্চিতভাবে ফেভারিট ইংল্যান্ড। তাদের বিপক্ষে এমন ভয়ডরহীন ক্রিকেট সচরাচর দেখা যায় না বাংলাদেশের কাছ থেকে। তবে তারুণ্য আর অভিজ্ঞতার মিশেলে গড়া দলটি আগ্রাসী ক্রিকেটের পথেই হেঁটেছে। তবে আজ ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কঠিন পরীক্ষাই দিতে হবে সাকিবের দলকে। প্রথম ম্যাচ হারলেও ইংল্যান্ডের ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থ্য সকলেরই জানা। ফলে সিরিজ জিততে হলে প্রথম ম্যাচের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার পাশাপাশি মাঠে ম্যাচ পরিকল্পনার পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে।
উইনিং কম্বিনেশন ধরে রাখার পাশাপাশি দল যে গতি পেয়েছে তার সঙ্গে তাল মেলানোর জন্য প্রথম ম্যাচের একাদশে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা কম। ৭ ব্যাটসম্যান ও ৪ বোলারের কৌশলটাই ধরে রাখতে পারে স্বাগতিকরা। তবে মিরপুরের উইকেট বিবেচনায় স্পিনারের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিলে ৩ পেসারের জায়গায় দুইজনের সঙ্গে বাড়তি আরেকজন স্পিনার একাদশে অন্তর্ভূক্ত হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। সেক্ষেত্রে ব্যাটিংয়ের সামর্থ্যরে কারণে মেহেদী হাসান মিরাজের একটি ক্ষীণ সম্ভাবনা থাকতে পারে। তবে তাসকিনের সঙ্গে দ্বিতীয় পেসার হিসেবে হাসান মাহমুদ মাঠের পারফর্ম্যান্সেই দাবি জানিয়ে রাখছেন। অন্যদিকে ইংল্যান্ড দলও উইকেটের কথা ভেবে একজন কম পেসার খেলানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে জানা গেছে। প্রথম ম্যাচের একাদশ থেকে বাদ পড়তে পারেন পেসার জফরা আর্চার।