ওসমান সরদার, জাবি প্রতিনিধি: প্রকৃতির এক অনন্য অনুষঙ্গ প্রজাপতি৷ এটি প্রকৃতির বিশুদ্ধতার একটি নির্দেশক বটে৷ যেস্থানে প্রজাপতি বেশি, ধরে নেয়া হয় সেখানকার আবহাওয়া প্রাকৃতিকভাবে নির্মল। প্রজাপতি সংরক্ষণ ও গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শুক্রবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অনুষ্ঠিত হলো প্রজাপতি মেলা—২০২৩।
মেলার ১৩ তম আসরে ছিল দিনভর নানা আয়োজন। শিশু—কিশোরদের জন্য প্রজাপতি বিষয়ক ছবি আঁকা ও কুইজ প্রতিযোগিতা, ছবি চত্বরে আয়োজন করা হয় প্রজাপতির আলোকচিত্র প্রদর্শনী, প্রজাপতির আদলে ঘুড়ি উড্ডয়ন, বারোয়ারি বিতর্ক প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি চেনা প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি বিষয়ক ডকুমেন্টারী প্রদর্শনী ইত্যাদি নানা আয়োজন। মোট কথা সব আয়োজনই ছিল প্রজাপতিকে ঘিরে। মেলার সবচেয়ে আকর্ষনীয় অংশ ছিল প্রজাপতি প্রদর্শনী৷ জালে ঘেরা ছোট্ট ঘরে প্রদর্শিত হয় নানা প্রজাতির ১৫-২০ টি প্রজাপতি। প্রদর্শনী ঘিরে দিনভর উচ্ছ্বসিত দেখা যায় শিশুসহ বিভিন্ন বয়েসী মানুষদের৷
তবে মেলা শেষে এক ভিন্ন চিত্রের দেখা মেলে। আয়োজকরা তাদের আসর গুটিয়ে চলে যাচ্ছিলেন, দর্শনার্থীরাও বিদায় নিচ্ছিলেন নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। তখন সেখানে অন্তিম শয্যায় মাটিতে পড়ে ছিল কয়েকটি প্রজাপতি।
শিক্ষার্থীদের মনে এ ঘটনায় সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। প্রজাপতি সম্পর্কে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এত আয়োজন করা হলেও মুক্ত আকাশের এ পতঙ্গকে খাঁচায় বন্দি করায় অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এ ঘটনাকে অমানবিক বলছেন তারা। প্রজাপতিকে নিয়ে এত আয়োজন হলেও প্রজাপতির দিনশেষে কি লাভ? প্রশ্ন দর্শনার্থীদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী ইলিয়াস হোসেন ২০১৯ সাল থেকে প্রতিবছর মেলায় আসেন। প্রজাপতির মৃত্যু তাকে খুবই ব্যাথিত করেছে। তিনি বলেন, ‘প্রাণ – প্রকৃতির বিষয়ে মানুষকে সচেতন করবে সেটা ঠিক আছে, কিন্তু সেটা করতে গিয়ে কিছু মুক্ত প্রাণীকে দিনভর খাঁচায় বন্দী করে রাখা তো ইথিক্যাল কোনো কাজ না। মারা গেলে তো সেটা আরও নিন্দনীয় একটা কাজ। তারা বিকল্প কিছু ভাবতে পারে।’
নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জোহরা জেসমিন তাহমিনা বলেন, ‘প্রদর্শনীর নামে প্রাণিদের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে। ওদের জীবন নিয়ে খেলা একদমই উচিত হয়নি৷ প্রাণিদের ওদের নিজেদের মতোই থাকতে দেয়া উচিত।’
মেলার সাথে যুক্ত প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের একজন গবেষক জানান, ‘চারটি ধাপে প্রজাপতির জীবনচক্র সম্পন্ন হতে ১৪ দিন- এক মাস সময় লাগে৷ সে হিসেবে প্রজাপতির লাইফস্প্যান খুব বেশি নয়৷ প্রাকৃতিক পরিবেশে থাকা বিশেষ প্রজাতির কিছু প্রজাপতি ধরে এনে এখানে প্রদর্শন করে থাকি৷ হয়তো ক্যাপচারের সময় তারা কিছুটা আঘাতপ্রাপ্ত হয়, এজন্যে দিনশেষে মারা যেতে পারে৷ তবে আমাদের মূল উদ্দেশ্য সচেতনতা সৃষ্টি। এখানে না দেখালে শিশুরা প্রজাপতি চিনবে না৷ তবে যদি বেশি প্রজাপতি মারা যায় তাহলে তো মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হয়।’
মেলার আহ্বায়ক প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘একটি প্রজাপতি গড়ে সাত দিন বাঁচে। আমরা যে প্রজাপতিগুলো আনি সেগুলো আগে থেকে কালচার করা থাকে। তাদের খাবার হিসেবে সারাদিন ফলের রস, ফুল দেয়া থাকে। তবে প্রতিবছরই কিছু প্রজাপতি মারা যায়। সেটাও আমাদের স্টাডির জন্য কাজে লাগে। তবে চিড়িয়াখানায় যেমন প্রাণীরা থাকে, তেমনি খাঁচায় প্রজাপতি থাকলেও তাদের কোন সমস্যা হয় না। সেখানে তাদের কোন ধরণের কষ্ট পাওয়া বা ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নাই।’