শপথ নিয়ে সিইসি বললেন-আওয়ামী লীগ নিয়ে বিতর্ক চলছে, আগে ফয়সালা হোক

0

নিজস্ব প্রতিবেদক : গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নিয়ে অনেক বিতর্ক চলায় তার ফয়সালার পরই দলটি নির্বাচনে আসতে পারবে কি না, সেই বিষয়টি দেখা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। রবিবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে শপথ নেওয়ার পর বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি।

আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনার ইচ্ছে আছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে নতুন সিইসি বলেন, “রিফর্ম কমিশনের সুপারিশ আসুক, অনেক বির্তক চলছে, বিতর্কের ফয়সালা হোক। ফয়সালা হলে আপনারাও দেখতে পারবেন।

“আমরাও অপেক্ষা করতেছি যে ফয়সালাটা কী আসে দেখি। তাহলে সেইভাবে আমরা ব্যবস্থা নেব। এই মুহূর্তে আমি বিগত সরকারি দল বা সহযোগী যারা ছিল, তাদের বিষয়ে আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”

প্রধান উপদেষ্টার কোনও রাজনৈতিক দল না থাকা বা কোনও রাজনীতি না করার কারণে একটি সুবিধা আছে বলে উল্লেখ করেন সিইসি।

তিনি বলেন, “আমাদের এই কমিশনের একটি অ্যাডভান্টেজ আছে, যেটা অন্য কোনও কমিশনের ছিল না।
যেহেতু সরকারের কোনও দল নাই, চিফ এডভাইজারের কোনও এজেন্ডা নাই, সুতরাং কোনও চাপ নাই। এটা আমাদের জন্য একটা বিরাট রিলিফ।”

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “যে শপথ নিয়েছি এর সম্মানটা রাখতে চাই। আমার শপথ ভঙ্গ হবে না, আমি এই দায়িত্বকে জীবনের একটি অপরচুনিটি (সুযোগ) হিসেবে দেখছি। দেশের মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত, তারা ফ্রি ফেয়ার একটা ইলেকশনের জন্য সংগ্রাম করেছে, অনেক আন্দোলন করেছে। বিগত বছরগুলোতে অনেকে রক্ত দিয়েছে। আমি তাদেরকে একটা ফ্রি, ফেয়ার এবং ক্রেডিবল (স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য) ইলেকশন দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবন্ধ।”

নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন বলে জানান এ এম এম নাসির।

তিনি বলেন, “আমি ইনশাল্লাহ কনফিডেন্ট। আমরা সবাই মিলে আপনাদের সবার সহযোগিতা নিয়ে, দেশববাসীর সহযোগিতা নিয়ে, রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতাসহ এ জাতিকে একটা স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পারব।”

আরেক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, “সংস্কার একটা চলমান প্রক্রিয়া, নির্বাচন করতে গেলে কিছু অ্যাসেনসিয়াল সংস্কার লাগবে। যেমন- এখন নানা রকম কথা হচ্ছে- আনুপাতিক ভোটের হারে এবং আগের নিয়মে হবে। সংবিধানে যদি এটার ফয়সালা না হয়, তাহলে আমরা নির্বাচনটা করব কীভাবে?”

নির্বাচনের আগে তরুণ ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি নির্বাচন সংস্কার কমিশনের গ্রহণযোগ্য সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান সিইসি।

তিনি বলেন, “ইলেকশন করতে ইয়ং জেনারেশন যারা ভোট দেওয়ার জন্য বছরের পর বছর মুখিয়ে আছে, তাদের তো ভোটার লিস্টে আনতে হবে। আমাকে ভোটার লিস্ট করতে হবে, কোথায় কোথায় রিফর্মেশনের দরকার হবে, সেটা আমরা পাব। এ বিষয়ে নির্বাচন সংস্কার কমিশন কাজ করছে। আগে তাদের পরামর্শ আসুক। যেগুলো গ্রহণেযোগ্য সেগুলো আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে।”

সংবিধান যদি ঠিক না হয়, তাহলে নির্বাচন কমিশনের যাত্রা ‘এলোপাথাড়ি’ হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করে সিইসি।

তিনি বলেন, “সংস্কার কমিশন কাজ করছে, এটা শেষ হোক। আর বেশিদিন তো নাই। সরকার বলছে ডিসেম্বরের মধ্যে কমিশনগুলোর রিপোর্ট দেবে। আপনারা আশ্বস্ত থাকুন, আমাদের নিয়ত সহি। ইনশাল্লাহ একটা ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন হবে।”

রাজনৈতিক দলগুলো ১৫-১৬ বছর ধরে ভোটের অধিকার চেয়ে আন্দোলন করে এসেছে—এটাকে আরেকটা সুযোগ হিসাবে দেখছেন সিইসি নাসির উদ্দীন।

তিনি বলেন, “তারা (দলগুলো) বলছে- ‘ভোটের অধিকার চাই। আমরা আমাদের ভোট দিতে চাই।’ সুতরাং আমরা তাদের সাথে পাব। তাদের দাবিকে বাস্তবায়ন করব, তারাও জাতির কাছে ওয়াদাবদ্ধ।”

কবে নাগাদ নির্বাচন দেবেন—এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “দিনক্ষণ দিয়ে তো এখন বলা যাবে না। আগে দায়িত্বটা নিই, কাজকর্ম বুঝে নিই, আমাদের বুঝতে দেবেন।”

বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশেষ চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবেলা করবেন—এ প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, “হতে পারে, এমন বিশেষ পরিস্থিতি আমার চাকরি জীবনে অনেক এসেছে, আমি তথ্য মন্ত্রণালয়, জ্বালানি মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলাম। জীবনে বহু চ্যালেঞ্জ দেখেছি- সাকসেসফুলি মোকাবেলা করেছি। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করার সাহস এবং অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে। যেকোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ আসুক সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে ওভারকাম করব।”

সিইসি যখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন নতুন নিয়োগ পাওয়া চার কমিশনারও উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন- সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমানেল মাসুদ, সাবেক যুগ্ম সচিব তাহমিদা আহমদ ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসাবে শপথ নিয়ে এ এম এম নাসির উদ্দীন বেলা ২টা ৫০ মিনিটে আগারগাঁয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে পৌঁছান। এসময় নির্বাচন কমিশন সচিব মো. শফিউল আজিম তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন।

এরপর চার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বৈঠক করে সোয়া ৪টায় নির্বাচন কমিশন ভবন সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সামনে উপস্থিত হন সিইসি।

আপনার মন্তব্য

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.